নতুন কৃষি বিল ২০২০, বিস্তারিত কারণ সহ।

আজকে আমরা জানব কৃষি বিল ২০২০,বিস্তারিত কারণ সহ। কৃষি বিল কী ? আসলে কেন, এই বিল কে, কৃষক বিরোধী বিল বা কৃষি বিরোধী বলা হচ্ছে।

কৃষি বিল বিতর্ক নিয়ে,কেন আজ,সারাদেশ উত্তাল। আর দিন প্রতিদিন,কৃষি বিল বিক্ষোভে,পাঞ্জাব,হরিয়ানা ,রাজস্থানের,কৃষক,কেন এই আন্দোলন কে, জোরদার করে তুলছে।

সরকার দ্বারা সংশোধিত,নতুন কৃষি আইন ২০২০, এ কী রয়েছে। যে কৃষকরা,কৃষি বিল ২০২০, কৃষি বিল বিক্ষোভকে,আরো বেশি জোরদার করে তুলছে।

নতুন কৃষি বিল ২০২০ এ,কোন তিনটি বিল,পাস্ করা হচ্ছে। যার বিরোধিতায়,আজ কৃষকরা,রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে। সরকার দ্বারা পারিত হওয়া, এই কৃষি বিল,কৃষকদের জন্য লাভ দায়ী নয় কেন !

আবার সরকারের মতানুযায়ী,কৃষি বিল যদি,কৃষকদের জন্য সহায়ক হয়। তাহলে,কতটা সহায়ক। আর যদি, সহায়ক হবে,তাহলে,কৃষকরা কেন,কৃষি বিল বিক্ষোভ ২০২০ এ,সামিল হচ্ছে।

কৃষক বিরোধী বিক্ষোভ ২০২০, বিস্তারিত,কারণ সহ


করোনা মহামারী আবহে,কেন্দ্রীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করে,তিনটি সংশোধিত কৃষি বিল নিয়ে আসছে। এই  বিলের বিরোধিতায়,

কৃষি বিল বিক্ষোভে,কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেলিব্রিটি সহ বিভিন্ন স্পোর্টসম্যান ও রাজনৈতিক নেতারা। এখন আমাদের বুঝতে হবে অধ্যাদেশ কী ?

ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ অনুযায়ী, ভারতীয় সংবিধান,আপৎকালীন পরিস্থিতে,যখন সংসদ বন্ধ থাকে। এরকম অবস্থায়।

ভারতীয় সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্রপতিকে,সময় বিশেষে আপদকালীন আইন প্রণয়ন করার। বিশেষ ক্ষমতা প্রধান করেছে। যাকে অধ্যাদেশ বলা হয়।

কৃষি বিল কী ? এই বিল,কৃষক বিরোধী বিল কেন ?


চলুন তাহলে,সহজ ভাষায় বোঝা যাক।কৃষি বিল কী ? কৃষি বিল ২০২০ এর,আসল সারমর্ম কে। সরকার যে তিনটি কৃষি বিল নিয়ে,এসেছে সেগুলি হল –

১.Essential Commodities Amendment Bill/ আবশ্যকীয় পণ্য ভান্ডার অধিনিয়ম-২০২০


সরকার ১৯৫৫ সালে,আবশ্যকীয় পণ্যের উপর, একটা বিল/আইন নিয়ে আসে। এই আইন অনুযায়ী, আবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রী।যেমন-চাল,গম, আটা,আলু,পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল ইত্যাদি দ্রব্য সামগ্রী।

কৃষক,মহাজন,ডিলার,ডিস্টিবিউটার। কেউ,তাদের গোদামে,সীমিত পরিমান ছাড়া,বেশি পরিমানে স্টোরেজ করে রাখতে পারবে না।

কিন্তু নতুন কৃষি আইন ২০২০ অনুযায়ী। যেকেউ মানে,যে কেউ। কৃষক,নেতা,ব্যাপারী,মহাজন,ডিলার সবাই।যে যার মত করে,আবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রী।

তারা তাদের গোদামে,যথেষ্ট পরিমানে স্টোরেজ করে রাখতে পারে। শুধুমাত্র দেশে মহামারী তথা প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই নিয়ম কার্যকর থাকবে না

এবার বোঝা যাক,কৃষক কেন এই কৃষি বিলকে,কৃষক বিরোধী বিল বলছে। কৃষি আইন ২০২০ কে,মানুষ সমর্থন করছে না কেন।

এই বিল কিভাবে,পুঁজিপতি দিকে সমৃদ্ধ করছে। আসুন বোঝার চেষ্টা করা যাক। আবশ্যকীয় পণ্য ভান্ডার অধিনিয়ম ২০২০ অনুসারে।

সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যকে,স্টোরেজ করে রাখার,অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে। এখন আপনি হয়তো বলবেন। সরকার তো শুধু একা,পুঁজিপতিদের স্টোরেজ করার ক্ষমতা দেয়নি।

কৃষক/ চাষী,সেও তো চাইলে পণ্য স্টোরেজ করে রাখতে পারে। আর এতে অসুবিধা কিসের। অসুবিধা আছে ! কী অসুবিধা,সেটা আমরা একটা উদারহনের সাহায্য নিয়ে,বোঝার চেষ্টা করব।

একজন কৃষক,তার উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী। বেশি দিন নিজের ঘরে,স্টোরেজ করে রাখতে পারেনা। রাখলেও সে তার প্রয়োজন মত রাখবে।

বাকি অবশিষ্ট ফসল,সে বাজারে বিক্রী করে দেবে। কারণ সে একজন চাষী। সে কোনো ব্যবসায়ী নয়।চাষী তার জমিতে,ফসল ফলাতেই ব্যস্ত থাকে।

এক ফসল উঠে যাওয়ার পর,আবার একটি ফসল বোনার,প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে।ফসল স্টোরেজ করার মত আলাদা গোদাম,আর সময় কিছুই তার কাছে থাকে না।

তাই কৃষক,বাজারে ন্যায্য দাম পেলেই ফসল বিক্রী করে দেয়,আড়ৎ কিংবা কোনো কৃষক বাজারে।

আরো পড়ুন : জমি রেজিস্ট্রি করার নিয়ম। 

আবশ্যকীয় পণ্য ভান্ডার অধিনিয়ম  ২০২০,কৃষি বিল নিয়ে বিতর্ক কেন

কৃষক দ্বারা বিক্রীত পণ্য সামগ্রী। আড়ৎ,দোকান দার মারফতে পৌঁছায়,কোনো পুঁজিপতির কাছে। পুঁজিপতিদের কাছে পণ্য স্টোরেজ করার মত গোদাম থাকে।

পুঁজিপতিরা তখন,আবশ্যকীয় পণ্যকে দাম বাড়ানোর জন্য,স্টোরেজ করে গোদামে রেখে দেয়। ব্যাপারটা আরো ভালো ভাবে বোঝা যাক।

ধরুন বাজারে,২৫ টাকা কেজি আলু বিক্রী হচ্ছে। বাজারের সমস্ত আলু ,কৃষকদের কাছ থেকে,পুঁজিপতিদের কাছে পৌঁছে গেছে।

পুঁজিপতিরা আলু স্টোরেজ করে,গোদামে রেখে দিয়েছে। ডিস্টিবিউটর এবং দোকানে,আলুর চাহিদানুযায়ী আলুর যোগান নেই। তখন বাজারে যে আলু মজুদ আছে।

চাহিদা অনুযায়ী যোগান না থাকায় দাম বাড়বে।ডিস্টিবিউটর,পুঁজিপতিদের কাছে আলু কিনতে গেলে বলবে,মজুত নেই। পুঁজিপতিরা নিজের ইচ্ছে মত, চড়া দামে আলু বাজারে ছাড়বে।

যে আলু কৃষক তখন ১৫ টাকা দামে বিক্রী করেছিল। সেই আলু তখন কৃষক,আপনি,আমি,ধনী,গরিব সবাই, কিনবে ৫৫ টাকা কেজি দরে।বাজারে আবশ্যকীয় পণ্যের,দ্রব্যমূল্যের উপর,

সরকারের কোনো,কন্ট্রোল থাকবে না। নতুন কৃষি বিল ২০২০ অনুযায়ী। প্রশাসন পুঁজিপতিদের গোদামে,হানা দিয়েও তাকে,আইনের দায়রায় নিতে পারবে না।

কারণ নতুন কৃষি আইন ২০২০ অনুযায়ী। আইন সবাইকে,শুধুমাত্র -যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়/মহামারী সময় ব্যতীত।আবশ্যকীয় পণ্য স্টোরেজ করার স্বাধীনতা দিয়েছে।

আপনারা জানেন,কোনো দেশেই সারাবছর। যুদ্ধ বা মহামারী লেগে থাকে না। এখানে কৃষি বিল ২০২০, পুঁজিপতিদের,কালোবাজারি করার রাস্তা খুলে দিচ্ছে।

তাই আজ সারাদেশে,কৃষকসহ বহু মানুষ। এই আইনকে বয়কট করে,কৃষি বিল বিক্ষোভে ২০২০ এ সামিল হচ্ছে।পাঞ্জাব,হরিয়ানার কৃষকরা,রাস্তায় নেমে আন্দোলনে সামিল হয়েছে।

বাগান পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র গুলি, Amazon এ গিয়ে দেখার জন্য ক্লিক করুন ⇒

২.Farmers Empowerment and Protection Agreement on Price Assurance and Farm Services Bill./ আশ্বাসন মূলক চুক্তি ভিত্তিক মূল্য নির্ধারিত কৃষি অধিনিয়ম -২০২০


২০১২ সালে,মনমোহন সিং সরকার। কন্টাক্টচুয়াল কৃষি কাজের মধ্যে দিয়ে,কণ্টাক্ট ফার্মিং/ চুক্তি ভিত্তিক,কৃষি বিল নিয়ে আসেন।

এই বিল অনুযায়ী,বিভিন্ন নির্মাতা কোম্পানী কৃষক দিকে,তার উৎপাদিত ফসল বোনার আগে। ঐ ফসলের মূল্য নির্ধারণ করে,ফসল বোনার জন্য চুক্তি করত।

পরে কৃষকের উৎপাদিত,সমস্ত ফসল। পূর্বের নির্ধারিত হওয়া মূল্যে,কিনে নিত। কিন্তু এরকম কৃষি কাজ,শুধু কোনো নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে,সীমিত ছিল।

নতুন কৃষি আইন ২০২০ অনুযায়ী,সরকার চাইছে। এই কৃষি বিল নিয়ে এসে,সমস্ত ভারতের কৃষকদের মধ্যে, কন্ট্যাক্ট ভিত্তিক, কৃষি আইন কার্যকর করতে।

ব্যাপারটা,আর একটু পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাক। মনে করুন,পতঞ্জলি কোম্পানি,একটি আটা নির্মাতা কোম্পানি।

এই কোম্পানির আটা সারা ভারতে বিক্রি করা হয়।সুতরাং স্বভাবতই,সারা ভারতে আটা যোগান দেওয়ার জন্য ১/২ কুন্টাল গমে হবে না।

তার জন্য ধরা যাক, ৫,০০০ হাজার মেট্রিক টন গমের প্রয়োজন।এখন পর্যন্ত, এই গম,পতঞ্জলি কোম্পানির কাছে গিয়ে পৌঁছায়।

কোনো আড়ৎ মাধ্যমে,কিংবা কিষান মন্ডি অথবা FCI এর কাছ থেকে কিনে নেয়।নতুন কৃষি আইন অনুযায়ী। এই গম আর আড়ৎ কিংবা FCI এর কাছ থেকে পতঞ্জলি কিনবে না।

কোম্পানি সরাসরি,কৃষকদের কাছ থেকে,চুক্তি ভিত্তিক কৃষিকাজের মাধ্যমে,গম কিনবে।কৃষকদের কাছে,কোম্পানি তার ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে আসবে।

আর কোম্পানি,তার সারা বছরের উৎপাদনের জন্য, যে ৫,০০০ মেট্রিকটন গমের প্রয়োজন।সেই অনুযায়ী ধরুন ৫০০ একর জমিতে,গম বোনার প্রয়োজন।

কৃষি বিল ২০২০

তখন কোম্পানি,ঐ ৫০০ একর জমির জন্য,ঐ তল্লাটের সমস্ত কৃষকদের কাছে,এসে গম বোনার জন্য বলবে।কারণ কোনো একজন কৃষকের কাছে,

এত পরিমানে জমি থাকবেনা। তাই এত পরিমান জমির জন্য,ঐ  তল্লাটের সমস্ত কৃষকের সঙ্গে,কন্ট্রাক্ট করতে হবে।তখন কোম্পানি কৃষকের কাছে,গমের আনুমানিক একটি মূল্য

ধার্য্য করে গম বোনার চুক্তি করবে। এতে কী হবে কৃষক তার ফসল বোনার আগে সুরক্ষিত একটা দাম পেয়ে যাবে।

অনেক সময় দেখা যেত,কৃষক যে মূল্যের আশা নিয়ে গম বুনছে। কিন্তু গম খেত থেকে ওঠার পর,সেই মূল্য পাচ্ছেনা। কিন্তু কন্টাক্ট ফার্মিং কৃষি কাজ হলে,

কৃষক তার ফসলের,একটি পূর্ব নির্ধারিত মূল্য,সুরক্ষা স্বরূপ পেয়ে যাবে। তাই পরে গমের দাম কমে গেলেও, কৃষকের কোনো লোকসান হবে না।

এই ভাবেই ধান,গম,আলু,ভুট্টা ইত্যাদি ফসল বোনার জন্য বিভিন্ন নির্মাতা কোম্পানি,যেমন- ব্রিটানিয়া,লেজ ইত্যাদি। চুক্তি ভিত্তিক কৃষি কাজ করার জন্য,কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করবে।

আরও পড়ুন : নতুন শিক্ষা নীতি ২০২০

কৃষক যে গুলি সংশোধন করতে চাইছে 


নতুন কৃষি আইন ২০২০ এর,২য় বিলটি কৃষকদের জন্য সত্যি খুব একটা ভালো বিল। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই বিল অনুযায়ী,আমাদের কৃষক ভাইয়েরা,ফসলের সুরক্ষা মূল্য পাবে। 

কিন্তু এই কৃষি বিলের,কিছু নকারত্মক দিক রয়েছে। সেগুলি সংশোধন করার প্রয়োজন আছে। নতুন এই ২য়, কৃষি বিল অনুযায়ী,কৃষক এর সঙ্গে ফসল বোনার,যে চুক্তি হবে।

তার মিডিয়েটর রূপে কৃষক বাজারের কোনো সরকারি কর্মচারী থাকবে। এর ফলে কৃষকদের মনে একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

সরকারি কর্মচারী যদি কোন কারণে কোম্পানির সঙ্গে, মিলে যায়। তাহলে কৃষকদের সরাসরি অভিযোগ কে শুনবে।

পরে কৃষকদের ফসল কিনতে যদি কোম্পানি অস্বীকার করে,তাহলে তার দায় ভার কে নেবে। কোম্পানি যদি,কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায়।

তাহলে কৃষকদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী,উৎপাদিত ফসল কে কিনবে। আবার ধরুন চুক্তি অনযায়ী,মনে করুন কোম্পানির সাথে,

আলুর দাম ধার্য্য হয়েছে ২৫ টাকা কেজি। পরে যদি বাজারে,সেই আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রী হয়। তাহলে,সেই মূল্যের ভরপায় কে করবে। এই সমস্ত বিষয়গুলি সরকারের,পুনঃবিচার করার প্রয়োজন আছে।

৩.Farmers Produce Trade and Commerce Promotion and Facilitation Bill/ কৃষি উৎপাদন ব্যাপার ও বাণিজ্য বিল-২০২০


এখন অবধি,কৃষক তার উৎপাদিত ফসল,ট্রাক্টর/ ট্রাকে করে নিয়ে এসে,কিষান মন্ডিতে বেচত। কিন্তু সরকার নতুন বিলের দৌলতে বলছে।

কৃষক তার উৎপাদিত ফসল। দেশে,বিদেশে,যে কোনো জায়গায় বেচতে পারে। কৃষক চাইলে ফসল কিষান মন্ডিতে কিংবা বাইরে বাজারে।

যেখানে ইচ্ছে,সেখানে বেচতে পারে। কিন্ত সরকারী সংস্থা NSSO,যে দেশের বেকার এবং কৃষকের লাভ ক্ষতি ইত্যাদির হিসাব দেয়।

সেই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী,দেশের ৫% কৃষক শুধু কিষান মন্ডিতে গিয়ে তাদের ফসল বিক্রি করে। বাকি ৯৫% কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল।

খোলা বাজারে বিক্রি করে থাকে।(বর্তমানে সরকার,NSSO সংস্থাটিকে বন্ধ করে দিয়েছে।)এই ৩য় বিলের দৌলতে,সরকার কিষান মন্ডি লুপ্ত করে দিতে চাইছে।

আগেকার দিনে,গরিব কৃষক। তার প্রয়োজনে,মহাজনের কাছ থেকে,সুদের বিনিময়ে টাকা ধার করত। পরে কোনো কারণে,সেই টাকা সুদ সহ ফেরত দিতে,না পারলে।

মহাজনের লোকজন,কৃষকের জমি থেকে, জোরপূর্বক,ফসল কেটে নিয়ে চলে আসত।এতে কৃষকের অভাব তো মিটতনা। সে সারা জীবন,ধার শোধ করতে,করতে।

মহাজনের গোলামে পরিনিত হয়ে যেত। এই জন্য সরকার একটি নিয়ম নিয়ে আসে।যাকে APMC (Agriculture Produce Market Commute)/,

বাজার সমিতি,দিল্লী,পাঞ্জাব হরিয়ানায় একে মন্ডি বলা হয়ে থাকে। এই মন্ডিতে কৃষক তার,উৎপাদিত ফসল বিক্রি করত।

এই মন্ডিতে কৃষক,যে ফসল বিক্রি করতে আসত। সেই ফসলের নিলামী চলত। পরে যে ব্যক্তি ঐ ফসলের সর্বোচ মূল্য দিত। কৃষক তাকে তার ফসল বিক্রি করে চলে যেত।

পরে মন্ডি থেকে বিভিন্ন বড় বড় নির্মাতা কোম্পানি। তারা তাদের প্রয়োজনীয় ফসল,ট্রাকের ট্রাক সেখান থেকে কিনে নিয়ে যেত।

সরকার কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এবং ফসলের খোলা বাজার উন্মুক্ত করে দিয়ে,এই মন্ডি প্রথা বিলুপ্ত করে দিতে চাইছে। আর এখান থেকেই যত রকম কৃষি বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু।

আরো পড়ুন : জমির রেকর্ড করা জরুরি কেন।  

 নতুন কৃষি বিল ২০২০ তে,কৃষি বিল বিতর্ক ও কৃষি বিল বিক্ষোভ এর কারণ


মন্ডি লুপ্ত হয়ে গেলে, মন্ডির মালিকগণ,মানে ধরুন যারা কৃষকদের কাছে থেকে এতদিন ফসল কিনে আসছিল তারা বড় বড় গোডাউন করে রেখেছে।

সেই গোডাউন গুলোর কী হবে। কৃষকদের ধারণা মন্ডি চলে গেলে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং দ্বারা,ধীরে ধীরে সরকার তাদের কাছ থেকে,MSP(Minimum Supporting Price),ছিনিয়ে নেবে। 

এই MSP নির্ধারণ করা হয়,CACP(Commission of Agriculture of Cost & Price)/কৃষি মূল্য আয়োগ সমিতি দ্বারা

কৃষি আইন ২০২০

আর এই CACP কে,পরিচালিত করে FCI(Food Corporation of India), সরকার দ্বারা,ফসলের যে নূন্যতম নির্ধারিত সুরক্ষা মূল্য দেওয়া হয়।

তাকে বলা হয় MSP/ নূন্যতম দ্রব্য মূল্য।এখানে কৃষকদের,এই বিলকে,কৃষক বিরোধী বিল বলার কারণ হল,কন্ট্রাক্ট ফার্মিং দ্বারা ফসলের যে MSP/নূন্যতম দ্রব্য মূল্য দেওয়া হচ্ছে।

এবং ফসল বোনার জন্য যে চুক্তি করা হবে। পরে ঐ ফসল বাজারে যদি,কোম্পানি দ্বারা দেওয়া MSP র থেকে বেশি দামে বিক্রি হয়। 

তাহলে সেই কৃষক,বাজারে বেশি দাম পেলেও,সেই ফসল বিক্রি করতে,পারবে না। যেহেতু সে প্রথমেই,ফসল বোনার আগে,কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি পত্রে সামিল হয়েছে। 

আবার ঐ MSP যদি,সরকার দ্বারা দেওয়া হয়। তাহলে,কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের দাম,সরকার দ্বারা দেওয়া MSP থেকে যদি বেশি পায়।

তাহলে সে তার ফসল,বেশি দামে বাজারে গিয়েও,বিক্রি করতে পারে। কারণ সরকারে সঙ্গে,তার কোনো সেরকম চুক্তি হয় নি।

কৃষক আজ,সরকার দ্বারা অনুমোদিত MSP-র দাবি করে। কৃষি বিরোধী বিল এর সমর্থনে আন্দোলন করছে। যদিও সরকার দ্বারা বলা হচ্ছে MSP বিলুপ্ত করা হবে না।

অন্যান্য কারণ


সরকারের বক্তব্য,FCI এর গোডাউন পুরোনো হয়ে গেছে। সেগুলির সংস্কারের প্রয়োজন। আর তাছাড়া FCI দ্বারা সরকার নিজে,২৫ টাকা কেজি দরে যে ফসল কেনে,

সেই ফসল,রেশনের মাধ্যমে মানুষকে,২ টাকা কেজি দরে দেওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমানে,সরকারি রাজস্ব ক্ষতি হয়।

আবার দেখা যায় কৃষক তার ফসল, FCI এর গোডাউনে যখন বেচতে আসে। FCI এর নির্ধারিত MSP অনুযায়ী। কিন্তু তখন দেখা যায়। 

FCI আধিকারিকরা,গোডাউনে রাখার জায়গা নেই বলে, কৃষককে ফিরিয়ে দেয়। তখন নিরুপায় কৃষক,তাদের ফসল। বাজারে কমদামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।

তখন আবার FCI এর অধিকারীরা বাজার থেকে,ঐ ফসল,কৃষকরা যে দামে বিক্রি করে গেছে,তা থেকে ৫ টাকা বেশি দরে কিনে নেয়।

আর সরকারি খাতায় MSP মূল্য অনুযায়ী,মূল্য তুলে দেয়। আর এভাবে FCI আধিকারিকরা,সরকার এবং কৃষক দুই জনকে ঠগিয়ে,রাঘব বোয়াল হয়ে,তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াতে থাকে। 

পরিশিষ্ট


পরিশেষে এটাই বলব। কৃষি বিল ২০২০ কে নিয়ে যে, কৃষি বিল বিরোধী, কৃষক আন্দোলন চলছে। তাই আমরা বলতেই পারি নিশ্চয় এমন কিছু বিষয় আছে।

যেগুলো সত্যিই হয়তো কৃষক হিতৈষী নয়। তাই আমি বলবো,সরকার এবং কৃষক উভয়ে মিলে,শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যার সমাধান খুঁজে,

কৃষি বিল ২০২০ এর সংশোধনের জন্য,পুনঃবিবেচনা করা উচিত।তবে একথা তো স্বীকার করতে হবে। কৃষকরা হলো আমাদের অন্নদাতা।

তাই কৃষকদিকে বঞ্চিত করে কোনো দিনই,দেশের এবং দশের উন্নতি সম্ভব নয়।পরিসংখ্যান বলছে,কৃষকরা আজোও আর্থিক ভাবে অনেক পিছিয়ে আছে।

১৯৪৭ সালের পরে,আজ অবধি কোনো সরকার,সঠিক ভাবে কৃষকদের জন্য ভাবনা চিন্তা করেনি।এখন সময় এসেছে ভাববার।

আমি বলব কৃষকদের জন্য সরকার ভাবুক। যেখানে সরকারি এবং অন্যান্য কর্মচারীদের স্বধীনতার পর আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০% এর কাছাকাছি।

সেখানে আমাদের অন্নদাতা কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে শুধুমাত্র ২১ %, মানে চিন্তা করুন। স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর।

আজকে যেখানে সরকারি কর্মচারীর রোজগার ১ টাকা থেকে ১৮০ টাকা হয়ে গেছে।সেখানে, আমাদের অন্নদাতা কৃষক।

যারা,দিন রাত মেহেনত করে,আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে। তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে,১ টাকা থেকে ২১ টাকা।

তাহলে বলুন,এখানে কৃষক আত্মহত্যা করবে। না তো কী,সরকারি কর্মচারী হত্যা করবে। বন্ধুরা ভাববার বিষয়।যাইহোক,আশাকরি আপনাদিকে,

কৃষি বিল ২০২০ এর,কৃষকরা কেন বিরোধ করছে।তার কারণগুলি যথা শ্রাধ্য বোধগম্য ভাবে,আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।আমার এই লেখাটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে।

তাহলে,আপনাদের কাছে অনুরোধ,এই কৃষি বিল প্রতিবেদন টি,আপনাদের প্রিয় জনদের সাথে শেয়ার করে, তাদিকেও পড়ার সুযোগ করে দেবেন। ধন্যবাদ।

আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ০৫ ষ্টার রেটিং দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here