King Maker আচার্য্য কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ও চাণক্যের জীবনী।

আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি King Maker আচার্য্য কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র (Koutilya arthasastra) চাণক্য নীতিশাস্ত্র এবং আচার্য্য চাণক্যের জীবনী ও জীবন সংগ্রাম নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটিকে আধুনিক অর্থনীতি,রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার ধারাপাত বললে কিছু ভুল বলা হবেনা। কৌটিল্য পন্ডিত তার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র (Koutilya arthasastra),

গ্রন্থটিতে আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার ভীতিপ্রস্তর ও পরিকাঠামো স্থাপনের নীল নকশা আঁকতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই এখন পর্যন্ত আধুনিক রাষ্ট্রপরিচালনার সর্বকালের সেরা গ্রন্থ হল

কৌটিল্য পন্ডিতের লেখা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র (Koutilya arthasastra)। ১৯০৫ সালে অধ্যাপক ডঃ শ্যামশাস্ত্রী ভারতের মহীশুর থেকে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বইটিকে উদ্ধার করেন।

এরপর অর্থশাস্ত্র বইটিকে,কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র নাম দিয়ে নতুন করে মুদ্রণ করা হয়। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বইটিতে সবমিলিয়ে ১৫০ অধ্যায়,১৫ টি খন্ড সহ মোট ৬,০০০ হাজারের কাছাকাছি শ্লোক আছে।

আজকে আমরা সেই কিংবদন্তী King Maker যাকে আমরা কৌটিল্য বলে চিনি,তার আর এক নাম হল চাণক্য। আমরা আজকের আলোচনায় সংক্ষিপ্তভাবে

চাণক্যের জীবনী ও তার রচিত কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বইটির নিরিখে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে সিংহাসনে আসীন করে অখন্ড ভারত নির্মাণের পিছনে কৌটিল্যের তীক্ষ্ণবুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন গল্পকথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

আরো পড়ুন : ২০২১ এর সেরা ঈদের শুভেচ্ছা কবিতা স্ট্যাটাস এস এম এস বাংলা। 

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ও চাণক্যের জীবনী (Chankya Biography)


চাণক্যের অপর নাম হল কৌটিল্য। তবে কৌটিল্যের আরও একটি নাম আছে,সেই নামটি হল বিষ্ণু গুপ্ত। সাধারণত চাণক্যের জীবনী নিয়ে ইতিহাসের পাতায়,

সেরকম ভাবে কোনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়না,যতটা তার রচিত গ্রন্থ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র (Koutilya arthasastra) বইটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

আচার্য্য চাণক্যের জীবনী সমন্ধে যে সমস্ত বই গুলি থেকে কিঞ্চিৎ জানতে পারা যায় সেই সমস্ত বই গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্রিক রাষ্ট্রদূতের ভারত ভ্রমণকাহিনী নিয়ে লেখা বই ‘ইন্ডিকা’,

বিষখাদত্তের কাশ্মীরি ভাষায় লেখা নাটক মুদ্রারাক্ষস এবং এখন পর্যন্ত সবথেকে বেশি ভালোভাবে চাণক্যকের জীবনীর উল্লেখ পাওয়া যায় বৌদ্ধ দর্শন ও জৈন দর্শনে।

চাণক্যের জন্ম হয় ৩২০ খ্রিস্টাব্দ পূর্বাব্দে বর্তমান পাকিস্তানের তক্ষশিলায়। কৌটিল্যের বাবার নাম হল চানক। কৌটিল্যের বাবার নাম থেকে কৌটিল্য চাণক্য নামটি পায়।

বাল্যকাল থেকেই চাণক্য ছিলেন একজন বিচক্ষণ মেধাবী ও বুদ্ধিপরায়ণ বালক। কথিত আছে চাণক্যের যখন জন্ম হয়,তখন চাণক্য ওপরের পাটিতে একটি দাঁত সঙ্গে করে জন্ম নিয়েছিলেন।

তাই জন্মদন্ত চাণক্যকে দেখে প্রতিবেশীরা বলত,এই রকম দাঁত নিয়ে কেউ সচরাচর জন্ম নেয়না। এই ছেলে,যে সে ছেলে নয়,

জন্মদন্ত থাকা হল রাজ যোগের লক্ষণ। চাণক্য বড়ো হলে হয় রাজা হবে,নয়তো কোনো রাজার মন্ত্রী হবে। যাই হোক এইভাবে চাণক্য ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে।

কিন্তু অপর দিকে চাণক্যের মায়ের মনে সর্বদা দুশ্চিন্তা ভর করতে থাকে। তার মনে একটাই চিন্তা,ছেলে রাজা হয়ে যদি তাকে ভুলে যায়,তাহলে অভাগিনী মা বাবার কি হবে। চাণক্য তার মা কে খুব ভালোবাসত।

একদিন চাণক্য তার বন্ধুদের সাথে খেলা করছিলেন বাইরের আঙিনায়। এমন সময় এক ঋষি ভিক্ষার আশায়  কৌটিল্যের মায়ের কাছে ভিক্ষা চাইতে আসে।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র

তখন কৌটিল্যের মা ঐ ঋষিকে তার ছেলে চাণক্যের ভাগ্য গণনার কথা বলেন। কিন্তু ঋষি মশায় ও চাণক্যের ভাগ্য গনণা করে একই কথা বলেন,চাণক্যের ভাগ্যে রাজযোগ রয়েছে।

এই কথা শুনে চাণক্যের মা কান্নায় ভেঙে পড়লে,ঋষি মশায় তার সন্দেহ দূর করার জন্য বলেন তুমি তোমার ছেলে কোটিল্যকে ডেকে পাঠাও এবং দেখ তোমার ছেলের সামনে দাঁতে নাগ দেবতার চিহ্ন আছে।

পরে কৌটিল্য বাড়ি ফিরে এলে কৌটিল্যের মা কৌটিল্যের দাঁত দেখতে গিয়ে দেখতে পায়,হ্যাঁ,ঋষি মশায়ের কথা সত্য। সত্যি-ই, কৌটিল্যের দাঁতে নাগ দেবতার চিহ্ন আছে।

কৌটিল্যের দাঁত পরীক্ষা করে দেখার পর কৌটিল্যের মা তো কান্নায় লুটিয়ে পরে। তখন কিশোর বালক কৌটিল্য তার মায়ের কাছ থেকে তার দুঃখ্যের কারণ জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে,

উঠোনে পড়ে থাকা পাথর দিয়ে আঘাত করে নিজে নিজের দাঁত ভেঙে তার মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বলে, আমার এই দাঁত যদি আমার মায়ের সঙ্গ ত্যাগ করার কারণ হয়,তার থেকে আমার এই দাঁত না থাকায় ভালো।

এই ঘটনা থেকেই আমরা অনুমান করতে পারি চাণক্যের মধ্যে বিন্দুমাত্র রাজভোগের অভিলাষ বা লোভ কিছুই ছিলনা। চাণক্য ছিলেন একজন সত্যিকারের সময়োপযোগী বাস্তববাদী মানুষ।

চাণক্য তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকেই চাণক্য নীতিশিক্ষা,সমুদ্র শাস্ত্র ,রাজনীতি ও সমাজবিদ্যার ওপর ডিপ স্টাডি করেন।

বর্তমানে তক্ষশীলা জায়গাটি আমাদের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি এলাকার অন্তর্ভুক্ত হলেও অখন্ড ভারতবর্ষের মানচিত্রে সেইসময় তক্ষশীলা ভারতবর্ষের অভিন্ন অঙ্গ ছিল।

তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন কৌটিল্য পরবর্তীকালে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পদে নিযুক্ত হয়। তার জ্ঞানের পরিধি বিচার করে চাণক্যকে মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের অর্থবিভাজন সমিতির প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ করা হয়।

কিন্তু একবার কার্যসূত্রে কৌটিল্য মগধের রাজ দরবারে উপস্থিত হলে কৌটিল্য পন্ডিতের কুৎসিত রূপ দেখে রাজা ধননন্দ কৌটিল্যকে তিরস্কার করে ভর্তি রাজসভা থেকে বার করে দেয়।

তখন মগধ ছিল ভারতের সবথেকে বড়ো ও শক্তিশালী রাজ্য। কিন্ত মগধের রাজা ধননন্দ প্রজা হিতৈষী ছিলেন না। তিনি সর্বদা প্রজাদের কাছ থেকে মোটা রকমের ট্যাক্স আদায় করতেন।

জনতার সেই ট্যাক্সের টাকা জনকল্যাণে খরচ না করে তিনি নিজস্ব ভোগ বিলাস,জুয়া আদিতে খরচা করতেন। বেশিরভাগ সময় মদের নেশায় মশগুল হয়ে থাকতেন,রাষ্ট্র কল্যানে তার ধ্যান ছিলনা।

এই গল্পে বৌদ্ধ দর্শন এবং জৈন দর্শনে কিছু মতভেদ আছে, জৈন দর্শন অনুযায়ী আচার্য্য কৌটিল্য মহারাজা ধননন্দের বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করতে যায়।

কৌটিল্য পন্ডিত দেখতে খুব একটা ভালো ছিলেননা,তার চেহারা এবং গায়ের রং দুইই কদাকার ছিল। সেখানে কৌটিল্যের কুৎসিত চেহেরা দেখে তাকে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান থেকে নিষ্কাশিত করা হয়।

এই ঘটনার পরে অনেকদিন কেটে গেছে ,পশ্চিমে ইরান,কান্দাহার,আফগানিস্তান জয় করে সেলুকাস অগ্রসর হতে থাকলে,কৌটিল্যের মনে সেলুকাসের ভারত আক্রমনের শঙ্কা জাগতে থাকে।

তখন দেশের নিষ্ঠাবান নাগরিক ও সেবক হিসাবে কৌটিল্য পন্ডিত মগধ সম্রাট ধননন্দ কে সেলুকাসের ভারত আক্রমণের সম্ভবনার কথা জ্ঞাত করাতে গেলে,চাণক্য আরও একবার

ধননন্দের রাজসভায় প্রচন্ড অপমানিত হন। রাজা ধননন্দ চাণক্যকে তিরস্কার করে বলে – “হে ব্রাহ্মণ তোমার কর্ম হল রাজার কল্যানে পূজার্চনা করে দেবতাকে সন্তুষ্ট করা,

রাজ কর্মে ভাগিদার হওয়া নয়।” সুতরাং তুমি আমাকে রাজপাট পড়াতে এসোনা। এইরকম বাক্য বিনিময় করে চাণক্য পন্ডিতকে রাজা ধননন্দ,

রাজ সভায় তিরস্কার করে এবং লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলেন ‘দ্বিতীয় বার যদি তোমার উপদেশ ও কথা রাজদরবারে শোনাতে এলে, তোমার মাথার চৈতন অথাৎ চুলের শিখা কেটে দেব।’

তখন ব্রাহ্মণ চাণক্যের চুলের শিখা,যাকে আমরা সাধারণত দেশি ভাষায় চৈতন ঝুঁটি বলে থাকি,সেই চুলের শিখা খসে যায় এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

ব্রাহ্মণের চুলের শিখা খসে গেলে কৌটিল্য পন্ডিত রাজার উপর প্রচন্ড ক্রোধিত হন এবং তিনি তার ক্রোধকে প্রতিজ্ঞায় বদলে নেন

এবং ধননন্দ কে বলেন হে রাজা তোমার কাছে ক্ষমতা ও রাজবল থাকতে পারে কিন্তু আমি সামান্য ব্রাহ্মণ আমার কাছে বিদ্যা আছে,

আমি এই রাজদরবারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছি যতদিন পর্যন্ত তোমার এই নন্দ সাম্রাজ্যের ভীত শিখর ভারতবর্ষের মাটি থেকে উপরে ফেলে দিচ্ছি ততদিন পর্যন্ত আমি আমার চুলের শিখা বাঁধবনা।

অপমানিত হওয়ার পর কোটিল্য হিমালয়ের পাদদেশে পিপলী বন গ্রামে জঙ্গলে একটি কুটির নির্মাণ করে নির্জনে দিন কাটাতে থাকেন।

এইভাবে পিপলী বন গ্রামে মনে,মনে ভাবতে থাকেন এবার তাকেই অখন্ড ভারত নির্মাণের জন্য ভারত বর্ষের যোগ্য উত্তরসুরী নির্মাণ করতে হবে।

এইভাবে মাস ০৬ কেটে যাওয়ার পর একদিন কোটিল্য জঙ্গলের অনতি দূরে একটা ঝোপ ঝাড় ভরা জঙ্গলে কয়কেটি ১৬-১৭ বছরের কিশোরকে দেখতে পেলেন।

দেখলেন তারা বনের মধ্যে রাজা ও প্রজার খেলা খেলছে। আর এই কিশোর গুলির মধ্যে একজন কিশোর সেখানে রাজা হয়েছেন।

চাণক্য সমুদ্র শাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন,তিনি মানুষের চেহারা দেখেই মানুষের মনে কি রয়েছে,তিনি কি বলতে চাইছেন সব কিছু বুঝে নিতে পারতেন,এমনকি ব্যক্তির দূরদর্শিতাও মেপে নিতেন।

তিনি ঐ কিশোরটির মধ্যে অখন্ড ভারতের রাজার ছবি দেখতে পেলেন। কৌটিল্য এতদিন ভারতবর্ষের যে যোগ্য উত্তরসুরীকে খুঁজছিলেন তাকে তিনি খুঁজে পেলেন।

ছেলেটির সম্বন্ধে খোঁজ নিয়ে রাজা হওয়া কিশোরটির নাম জানতে পারলেন,ছেলেটির নাম হল চন্দ্র। কিন্তু চাণক্য শুধু সমুদ্র শাস্ত্রের জ্ঞানের উপর ভরসা রাখতে পারলেননা।

তিনি ভারতবর্ষের উত্তরসুরীর পরীক্ষা নিতে চাইলেন। আর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পৌঁছেগেলেন তাদের খেলার প্রাঙ্গনে। কৌটিল্য পন্ডিত রাজা হওয়া ছেলেটির কাছে

গিয়ে বললেন তুমি তো রাজা,তাহলে আমিও তো ব্রাহ্মণ,আর ব্রাহ্মণ কে দান দেওয়া হল রাজার কর্তব্য,তাহলে তুমি আমাকে দান দাও।

তখন চন্দ্র নামের রাজা হওয়া ছেলেটি কৌটিল্যকে বললেন-“হে ব্রাহ্মণ তুমি এই বনের মধ্যে যে সমস্ত গাভী ঘাস খাচ্ছে দেখছো,এই সমস্ত গাভী আমি তোমাকে দান করলাম।”

তখন কৌটিল্য বললেন এই গাভী কি করে তোমার হল ? এই গাভী তো তোমার নয় এই গাভী হল অন্য কারো, এই গাভী গুলি যদি আমি এখান থেকে নিয়ে যায় তাহলে যার গাভী সে তো আমাকে বাধা দেবে।

তখন বালক চন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে তার তরবারি বার করে বললেন হে ব্রাহ্মণ তুমি নির্ভয়ে গাভী গুলি নিয়ে যেতে পারো রাজার দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে ব্রাহ্মণের রক্ষা করা আমার পরম কর্তব্য

যে রাজ্যে ব্রাহ্মণের সম্মান নাই সে রাজ্যের কল্যাণ কোনোদিন হতে পারেনা। এইভাবে কৌটিল্য পন্ডিত কিশোর  চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন রাজা চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যকে।

 চাণক্য নীতিশাস্ত্র


এরপর কৌটিল্য চন্দ্রগুপ্ত কে তক্ষশিলায় নিয়ে আসেন এবং চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য আচার্য চাণক্যকে গুরু হিসাবে স্বীকার করেন ও চন্দ্র গুপ্ত কৌটিল্যের কাছ থেকে চাণক্য নীতিশাস্ত্রের শিক্ষা নেন।

তক্ষশিলায় চন্দ্র গুপ্তকে কৌটিল্য অস্ত্রবিদ্যা সহ বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণ,সমাজ শাস্ত্র কূটনীতি বিদ্যা আদি বিষয়ে দক্ষ করে ফেললেন।

কিন্তু ক্রমাগত সেলুকাসের ভারত আক্রমণের সম্ভবনা প্রচন্ড হয়ে এলে,কৌটিল্য চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যকে তার কূটনীতির ঘোড়া হিসাবে ভরপুর প্রয়োগ করেন। সেলুকাসের ভারত আক্রমণ প্রতিরোধ

করার জন্য এক জটিল কূটনীতির প্রয়োগ করে চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যকে বলেন-“যতক্ষণ পর্যন্ত শত্রুর দুর্বল জায়গা শনাক্ত করা না যাচ্ছে,ততক্ষন পর্যন্ত শত্রুর সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখায় উত্তম।”

কৌটিল্যের এই কথার তাৎপর্য কিশোর চন্দ্র গুপ্ত বুঝে উঠতে পারলেন না, তখন কৌটিল্য কূটনীতির প্রয়োগ করে বলেন,হে চন্দ্র গুপ্ত, সেলুকাস সিন্ধু নদী পার হওয়ার আগে,

তোমাকে সেলুকাসের সেনাবাহিনীতে এক মিত্রের ন্যায় প্রবেশ করতে হবে এবং সেলুকাশের বিশ্বাস অর্জন করে তার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠতে হবে।

রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। 1 1
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র

এরপর চন্দ্র গুপ্ত ও তার ১০-১৫ জন সঙ্গী সেলুকাসের সেনাবাহিনীতে সামিল হয়ে,সেলুকাসের বিশ্বাস অর্জন করে নেয়। সেলুকাসের সেনাবাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপের খবর কৌটিল্য পন্ডিতের কাছে পৌঁছাতে থাকে।

সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে মেলামেশা করে চন্দ্র গুপ্ত বুঝে যায় সেলুকাসের সেনা বাহিনী উত্তর পশ্চিম দেশ গুলোর সাথে যুদ্ধ করে ও পথ চলে তারা শারীরিক দিক দিয়ে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

চন্দ্রগুপ্তের কাছে এই ছিল এক সুবর্ন সুযোগ,চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য কৌটিল্যের কাছে এই খবর পৌঁছে দিলে,কৌটিল্য পরামর্শ দেন সেলুকাসের সেনা বাহিনী শারীরিক দিক দিয়ে অনেকটাই ক্লান্ত

তাই এই সুযোগে শুধু সেনাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারলেই বিনা যুদ্ধে সেলুকাসকে হারানো যাবে এবং সেলুকাস নিজে থেকেই ভারত ছেড়ে পালাবে।

আর যে সুযোগ ও সময়ের সৎ ব্যবহার করে সেই ব্যক্তি হল প্রকৃত বুদ্ধিমান। এরপর চন্দ্র গুপ্ত কৌটিল্যের নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী দিকণ্টক নীতি প্রয়োগ করেন।

সেলুকাসের সেনাবাহিনী সিন্ধু নদী পার হওয়ার আগেই চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে গুজব ছড়ানো শুরু করে দেয়। সেনাবাহিনীতে এক রকম ভ্রান্ত ধারণা

ও গুজব ছড়াতে শুরু করে,ভারত হল দেবী ও দেবতার দেশ,তাই ভারতের দেবী ও দেবতা তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট। সুতারং তোমরা যদি ভারতের দিকে অগ্রসর হও তাহলে তোমাদের অকল্যাণ হবে।

এরপর ধীরে ধীরে চন্দ্র গুপ্ত কখনো সেলুকাসের যুদ্ধ জয়ী পতাকায় পাহাড়ের উপরে নিয়ে গিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়,আবার কখনো কখনো সেনাদের মধ্যে আপোষে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে,

অন্তঃকলহের সৃষ্টি করতে থাকে। আবার কখনো ছোট,ছোট খন্ড যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে সেলুকাশের সেনাদের মনোবল ভাঙতে শুরু করে।

এইভাবে চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য কৌটিল্যের পরামর্শে সেলুকাশের সেনাবাহিনীকে ধীরে ধীরে ভিতর থেকে ঝাঁঝরা করে দেয়। এর ফলে সেলুকাসের মনোবল ভেঙে পরে এবং

সেলুকাস কোনো প্রকারে প্রাণ বাঁচিয়ে  তার সেনাবাহিনী নিয়ে পলায়ন করে এবং চন্দ্রগুপ্তের চেষ্টায় ও চাণক্যের পরামর্শে ভারত আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সমর্থ হয়।

সেলুকাসের ফেলে যাওয়া হাতি সওয়ার বাহিনী,ঘোড়া সওয়ার ও রথ সওয়ার সহ প্রায় ৫০০০ সেনাবাহিনীকে চন্দ্র গুপ্ত নিজের সেনাবাহিনীতে সামিল করে নেয় এবং

ওভার কনফিডেন্সের সাথে চন্দ্র গুপ্ত ৫০০০ সেনাকে সঙ্গে নিয়ে মগধের রাজধানী পাটলিপুত্র আক্রমণ করে, কিন্তু এই ওভার কনফিডেন্সের জন্য চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য অসফল হয়।

কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই মগধে আক্রমণ করে,পুরোদিন যেতে না যেতেই অর্ধেক বেলাতেই চন্দ্র গুপ্তের সেনা ধননন্দের কাছে ধরাশয়ী হয়ে যায়।

এই যাত্রায় কোনো রকমে চন্দ্র গুপ্ত পালিয়ে গিয়ে প্রাণ নিয়ে,কৌটিল্য পন্ডিতের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। চন্দ্র গুপ্ত কৌটিল্যের কাছে পৌঁছেই তার যুদ্ধে পরাজয়ের ঘটনাক্রম বর্ণনা করতে চাইছিলেন।

কিন্তু চাণক্য চন্দ্রগুপ্তকে বলেন এই নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করব,তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি যথেষ্ট ক্লান্ত ও ক্ষুধার্থ তাই তোমার আগে ভোজন ও বিশ্রামের প্রয়োজন।

এরপর কৌটিল্য পন্ডিত চন্দ্রগুপ্তকে একটা থালায় গরম খিচুড়ি খেতে দেয়। তখন চন্দ্র গুপ্ত তাড়াহুড়ো করে হাতের চেটোয় গরম খিচুড়ির থালাটাকে নিয়ে খেতে বসে।

খিচুড়ির মাঝে হাত লাগিয়ে খিচুড়ি খাওয়ার চেষ্টা করে,এতে চন্দ্র গুপ্তের হাতের আঙ্গুল এবং হাতের চেটো দুই জাগাই গরম ছাঁকা লাগে ও হাত পুড়ে যায়।

তখন চাণক্য পন্ডিত বলেন গরম ভোজন অথাৎ খিচুড়ির মধ্যে হাত না লাগিয়ে খিচুড়িকে,ধীরে,ধীরে ঠান্ডা করে এক ধার থেকে কিনারা দিয়ে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে আস্তে,আস্তে খেতে হয়।

এরপর কৌটিল্যের কথামত চন্দ্রগুপ্ত এক কিনারা থেকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করে আস্তে,আস্তে খাবার খায়। খাবার খাওয়া শেষ হলে চন্দ্র গুপ্ত আবার তার যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ নিয়ে,

কৌটিল্য পন্ডিতের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে,চাণক্য বলেন তোমার যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ আমিতো তোমাকে তোমার ভোজন করার সময়েই বলে দিয়েছি।

এই উত্তর শুনে চন্দ্র গুপ্ত বিস্মিত হয়। সে চাণক্য পন্ডিতের উত্তরের কোনো কুল কিনারা খুঁজে পায় না। তখন চাণক্য পন্ডিত চন্দ্র গুপ্তকে বুঝিয়ে বলেন,

মগধ সাম্রাজ্য হল গরম থালা বা পাত্রের ন্যায়,আর সেই পাত্রের নিম্ন দেশে মাঝখানে হাত লাগাতে গেলে ছাঁকা লাগবে। আর মগধের রাজধানী পাটলিপুত্র হল গরম খিচুড়ির মধ্যে খানি।

তাই সোজাসুজি তোমার মগধ রাজ্যের কেন্দ্র বিন্দুতে আক্রমণ করা ঠিক হয়নি। মগধ কে হাতে আনতে হলে আগে তার প্রতিবেশী ছোট ছোট রাজ্য গুলিকে জিততে হবে। গরম পাত্রের মত

পাত্রের কিনারাতে আগে হাত লাগাতে হবে। তার পর ধীরে,ধীরে কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে। মগধকে জয়ে করার জন্য চন্দ্রগুপ্তকে দেওয়া কৌটিল্যের নীতিশাস্ত্র,কৌটিল্য সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের বিবরণ নামে পরিচিত।

আরো পড়ুন : অভিশপ্ত কোহিনুর হীরার ইতিহাস। 

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব


চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধের আশে পাশের ছোট,ছোট ১৬ টি রাজ্যকে এক সুতোয় বেঁধে অখন্ড ভারতবর্ষের ভীত তৈরি করে গেছিলেন। আর এই ১৬ টি রাজ্য যা ষোড়শ মহাজনপদ নামেও পরিচিত

এই ১৬ টি রাজ্য এবং মগধ দখল করার জন্য চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের অনুসরণ করেন যা কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের বিবরণ নামেই বেশি পরিচিত।

আসুন একনজরে কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের বিবরণ সহ সেই ০৭ টি তত্ত্বকে জানা যাক –

০১. চাণক্য নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য মগধ রাজ্যের শিখরে আক্রমণ না করে মগধের সীমান্তবর্তী রাজ্য অথাৎ রাজধানী থেকে দূরে কিনারার  রাজ্য গুলিকে আক্রমণ

করে ধীরে,ধীরে ধননন্দের মগধ সাম্রাজ্যকে ভাঙতে শুরু করে। চাণক্য নীতিশাস্ত্রের মূল কূটনীতি ছিল শত্রুকে আক্রমণ করার আগে শত্রুকে পঙ্গু করে দেওয়ায় শ্রেয়।

০২. চাণক্য নীতিশাস্ত্রের নীতি অনুযায়ী চন্দ্র গুপ্তের সেনাবাহিনীতে প্রথমবার শত্রু রাজাদের রাজ্য জয় করার জন্য “বিষকন্যা” নামের এক ধরণের স্পেশাল সেনা তৈরি করা হয়।

এই বিষকন্যা নামক সেনা বাহিনীকে চাণক্য বিশেষ ধরণের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেন। বিষকন্যা সেনাতে সামিল করার জন্য রাজ্যের সুন্দর ও রূপসী যুবতী মেয়েদের,

বিষকন্যা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এই যুবতী মেয়েদীকে প্রতিদিন একটু,একটু করে বিষ পান করানো হত। আর এইভাবে ধীরে ধীরে বিষ কন্যার দেহ বিষাক্ত হয়ে বিষময় হয়ে যেত।

বিষকন্যার শরীরে বিষ সহ্য করার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা হত। বিষকন্যার প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে গেলে সেই সমস্ত বিষকন্যা দেরকে বিভিন্ন রাজার শয্যায় পাঠানো হত,

আর যখনই কোনো রাজা কামের ভোরে এই বিষকন্যার ঠোঁটে চুম্বন করতে এলেই ঠোঁটের বিষ ক্রিয়ায় সেই রাজার মৃত্যু হতো। আর এই ভাবে সেই রাজার রাজত্ত্ব বিনা যুদ্ধে চন্দ্র গুপ্তের অধীনে চলে আসত।

০৩. চাণক্য নীতিশাস্ত্রের আর একটি নীতি ছিল প্রতিবেশী রাজ্যে বিশেষ গুপ্তচর নিয়োগ করে প্রতিবেশী রাজ্যের রাজা এবং তার প্রকৃতি সমন্ধে পূর্বে অবগত হওয়া।

চাণক্য নীতিশাস্ত্রে বলে গেছেন “শত্রুর সঙ্গে শত্রুতা কখনোই ক্রোধের বশে করা উচিত নয়”,শত্রুর নিধন পরিকল্পনা সর্বদা মাথা ঠান্ডা রেখেই করা উচিত।

০৪. চাণক্য নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্যের সেনাবাহিনী হল সেই রাজ্যের ক্ষমতা ও শৌর্য্যের আধার স্বরূপ। তাই যে দেশের সেনাবাহিনী যত বড় ও বিশাল সেই দেশ সামরিক ভাবে তত মজবুত।

আচার্য্য চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের সেনাবাহিনীকে সুবিশাল ও মজবুত করার জন্য নিজে বাৎস্যায়ন মুনির ছদ্মবেশ ধারণ করেন। বাৎসায়ন মুনির ছদ্মবেশ ধারণ করে,

কৌটিল্য বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে প্রবচনের মধ্যে দিয়ে আধ্যাত্মিক কথা শুনিয়ে মানুষের মন,বুদ্ধি ও আত্মাকে জয় করে,মানুষকে চন্দ্র গুপ্তের সেনা বাহিনীতে সামিল হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে থাকে।

আর এইভাবে ধীরে ধীরে কয়েক বছরের চেষ্টায় কৌটিল্য মানুষের মন জয় করে চাণক্য নীতিশাস্ত্র নিরিখে প্রায় ০৮ লক্ষ মানুষকে চন্দ্র গুপ্তের সেনায় সামিল করেন,যা ধননন্দের সেনার তুলনায় ছিল প্রায় ০৪ গুন্ বড়ো।

০৫. কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের মধ্যে অন্যতম হল-যোগ্য ব্যক্তিকে উচিত মর্যাদা ও পদে আসীন করা। কৌটিল্য পন্ডিত সর্বদা বলতেন মেধা মূল্যায়ন করে যোগ্য ব্যক্তিকে তার উচিত পদমর্যাদা,সম্মান দেওয়া উচিত।

০৬. কৌটিল্য সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের মধ্যে অন্যতম হল,দেশের সেনাবাহিনীতে নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যুদ্ধ অভ্যাস ও গোরিলা যুদ্ধ অনুশীলন করা,নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষার  মধ্য দিয়ে সৈন্যদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে।

০৭. প্রত্যেক সরকারের বিদেশ নীতি সুন্দর ও সুসংগঠিত হওয়া উচিত। কৌটিল্য চন্দ্র গুপ্তের সেনাবাহিনীতে উত্তরের বিভিন্ন কাশ্মীরি রাজা,

এছাড়াও বিভিন্ন জলদস্যু ও সেলুকাসের বশ্যতা স্বীকার করা বহু ইউনানী রাজাকে কৌটিল্যের নির্দেশে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নিজের সেনাবাহিনীতে সামিল করেন।

আর এইভাবে চন্দ্রগুপ্ত কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের সুপরামর্শে ও নিজ দক্ষতায় ধননন্দের মগধ সাম্রাজ্যকে শিখর থেকে উপরে ফেলে দিয়ে,মৌর্য সাম্রাজ্য স্থাপন করে।

আরো পড়ুন : টাইটানিক জাহাজ কিভাবে ডুবেছিল। 

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র (Koutilya arthasastra)


সেলুকাসের ভারত আক্রমণের ২০ বছর অতিক্রম করে গেছে,সেলুকাসের মৃত্যু হলে সেলুকাসের সেনাপতি সিকন্দর রাজপাটের দায়িত্বভার নেয়।

কিন্তু এবারে সিকন্দররের সেনাবাহিনী আগের থেকে বেশি শক্তিশালী ও মজবুত। সিকন্দর কাবুল,কান্দাহার আফগানিস্তান জয় করার পর ভারত আক্রমণের লক্ষ স্থির করেন।

কিন্তু তখন ভারতের সিংহাসনে আসীন ছিলেন অখন্ড ভারতবর্ষের রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। তখনকার ভারত  কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ও নীতি জ্ঞানে হয়ে উঠেছিল আরো বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী।

অপরদিকে গভীর আত্মবিশ্বাসের সাথে সিকন্দর ভারতবর্ষে চন্দ্রগুপ্তের মৌর্য সাম্রাজ্যে আক্রমণ করলেন কিন্তু  অভিষ্ঠ লাভে সক্ষম হলনা সিকন্দর।

চন্দ্রগুপ্তের সাথে যুদ্ধে গুরুতর হার হল সিকন্দরের। সিকন্দর বাধ্য হয়ে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। কৌটিল্য চাইছিলেন সিকন্দর আত্মসমর্পণ করুক,

সিকন্দরের কাছে তার প্রাণের বিনিময়ে ০২ টি শর্ত রাখলেন,-০১.সিকিন্দরের পশ্চিমের কান্দাহার,বালুচিস্তান,  কাবুল,আফগানিস্তান আদি রাজ্য গুলি চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যের অধীনে দিতে হবে।

০২. সিকন্দরের কন্যা হেলিনার সাথে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বিবাহ দিতে হবে। তবে এর মধ্যে একটি শর্ত হল হেলিনার ঔরস জাত সন্তান চন্দ্রগুপ্তের উত্তরসূরী হতে পারবেনা।

কারণ হেলিনা হল একজন বিদেশী নাগরিক সুতরাং একজন বিদেশী নাগরিকের রক্তে কখনো দেশ প্রেমের বীজ বপন হতে পারেনা।

আচার্য্য কৌটিল্যের ০২টি শর্ত বিনা দ্বিধায় সিকন্দর মেনে নিলেন। সিকন্দর তার অধীনস্থ বশ্যতা স্বীকার করা রাজ্য গুলি চন্দ্রগুপ্তের হাতে তুলে দিলেন এবং মেয়ে হেলেনার বিয়ে দিলেন চন্দ্রগুপ্তের সাথে।

কৌটিল্য যে হেলিনার সাথে চন্দ্রগুপ্তের বিয়ে করার অকস্মাৎ প্রস্তাব দেয়,সেই বিষয়ে চন্দ্রগুপ্ত কৌটিল্যের কাছে জানতে চায়,-“হে আচার্য্য সিকন্দর তার জয় করা রাজ্য আমাদের মৌর্য সাম্রাজ্যের হাতে তুলে দিতে রাজি,

তাহলে তার মেয়ে হেলিনার সাথে বিবাহের কি আবশ্যকতা ছিল ?” তখন চাণক্য পন্ডিত চন্দ্রগুপ্তকে রাজপ্রসাদ থেকে দূরে একটি বনের মেঠো পথে কণ্টক সংকুল পথে নিয়ে গেলেন।

পথের মধ্যে কাঁটা দেখিয়ে বললেন- হে চন্দ্র তুমি এই কাঁটার উপর পা দিয়ে চলো। কাঁটার উপর পা রাখতেই চন্দ্রের পায়ে কাঁটা ফুটল। কৌটিল্য তখন চন্দ্র গুপ্তকে বললেন,

এমন কি উপায় অবলম্বন করলে এই পথ থেকে কাঁটা লতা গাছটিকে নির্মূল করা যায়। তখন চন্দ্র গুপ্ত বললেন তাহলে কাঁটা গাছটিকে গোঁড়া থেকে কেটে দিলেই কাঁটা গাছটি মারা যাবে

এবং পথের কাঁটা সরে যাবে। চন্দ্রগুপ্ত তখন তরবারি দিয়ে কাঁটা গাছটিকে কেটে ফেলতে গেলেন,তখন কৌটিল্যে বাধা দিয়ে বললেন দাড়াও চন্দ্র !

এবারে কৌটিল্য একটি মিষ্টির ভাঁড়ে করে চিনির সিরা ভর্তি করে নিয়ে এসে,কাঁটা গাছটির গোড়ায় ঢেলে দিলেন। চন্দ্রগুপ্ত তখন আশ্চর্যের সঙ্গে বললেন এ কি করছেন আচার্য্য ?

কৌটিল্য তখন চন্দ্রগুপ্তকে বললেন তুমি যদি তরবারি দিয়ে কাঁটা গাছটিকে কেটে ফেল,তাহলে সাময়িক ভাবে ওই পথে কাঁটা গাছটি মারা যাবে ঠিকই,তবে ভবিষ্যতে

কাঁটা গাছটির দ্বিতীয়বার ঐ স্থানে গজাবার সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু বৎস আমি যে চিনির সিরাটি গাছের গোড়ায় ঢেলে দিলাম এতে চিনির সিরার গন্ধে

পিঁপড়েরা এসে জমা হবে সিরা থেকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য। পিঁপড়ে গুলো সিরা থেকে মিষ্টি চাটতে চাটতে শিকড় পর্যন্ত খেয়ে গাছটির মূল কান্ড পর্যন্ত ফোকলা করে দেবে,

গাছটি একেবারে সেখান আপনা থেকেই নির্মূল হয়ে যাবে। আর এই জন্য আমি তোমার সাথে হেলিনার বিয়ে দিয়ে তোমার শত্রুকে গোঁড়া থেকে মুছে দিতে চাইছি।

একবার তোমার সঙ্গে হেলেনার বিয়ে হয়ে গেলে আর দ্বিতীয় বার সিকন্দরের কোনো বংশধর নতুন করে তার আত্মীয়ের ঘরে আক্রমণ করতে আসবেনা।

তাইতো দূরদর্শী কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে (Koutilya arthasastra) আচার্য্য চাণক্য পন্ডিত বলেছেন “সমস্যার সমাধান না খুঁজে সমস্যার কারণ খুঁজে বার করাই শ্রেয়।”

০১. কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে আর্থিক দুর্নীতি ও অরাজকতা যেকোন দেশের দুর্বলতার মুখ্য কারণ। তাই সবার প্রথম রাজ্যে অরাজকতা ও আর্থিক দুর্নীতিতে লাগাম লাগানো প্রয়োজন।

এর জন্য চাণক্য কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে কিছু নিয়ম অনুপলনার কথা বলেছেন- ক)প্রত্যেক বছর সময় মাফিক অর্থব্যবস্থার অডিট / মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। খ) প্রত্যেক বৃত্তীয় কর্মচারীর স্থানান্তর ব্যবস্থার প্রয়োজন,

গ) প্রত্যেক রাজার উচিত সেই দেশের লিখিত সংবিধান তৈরি করা,যা সমাজের সব ধরণের মানুষের উপর তাদের অপরাধ অনুযায়ী সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। ঘ) সরকারি কার্যকরণ ব্যবস্থা সঠিক ভাবে গড়ে তোলা।

০২. কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে সরকারি কার্যকরণ ব্যবস্থার সুন্দর বিবরণ দেওয়া হয়েছে – ১.কি কাজ সম্পন্ন করতে হবে ?,২. কে কাজ সম্পন্ন করবে ?,৩.কিভাবে কাজ সম্পন্ন  করতে হবে ?

৪. কতদিনে সম্পন্ন হবে ?,৫. কার সাহায্যে সম্পন্ন হবে ?,৬. কতদিনে সম্পন্ন হবে ? ৭.কাজের মূল্যায়ন নিরীক্ষা কে করবে, আজকের দিনে যাকে আমরা সুপার ভাইজারি অফিসার বলে থাকি।

০৩. চাণক্যের নীতিশাস্ত্র ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ০২ টি গ্রন্থে বলা হয়েছে- “বিষধর সাপকে দুধ খাওয়ালে,সেই সাপের বিষই বাড়ে,সাপকে দুধ পান করিয়ে কোনোদিন তার থেকে অমৃত পাওয়ার আশা করা যায় না।”

“দুর্জনেষু চ: সর্পেষু বর সর্পে ন: দুর্জন:!                                         

সর্পে দংসন্তি কালেন: দুর্জনাস্তু পদে: পদে: !

অথাৎ দুর্জন লোকের সঙ্গে থাকার চেয়ে বিষধর সাপের সঙ্গে থাকা অনেক ভালো। কারণ দুর্জন ব্যক্তি তোমাকে প্রতি পদে পদে দংশন করবে। আর বিষধর সাপ তোমাকে শুধু একবার দংশন করবে।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র

০৪. কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে (Koutilya arthasastra) “দেশের কল্যানে দশের কল্যাণকে”একজন রাজার পরম কর্তব্য হিসাবে বলেছেন। এককথায় সবার আগে রাষ্ট্র হল প্রধান। আর তার নীচে রাজা ও প্রজা ইত্যাদি।

তাইতো তখনকার দিনে “জয় মা ভারতীর” মতো রাষ্ট্র শ্লোগান উচ্চারণ করে দেশেকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে  Nation First এর ধারণা মানুষের মনে গড়ে তুলেছেন।

এই নিয়ে কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্রের নিরিখে একটি সুন্দর গল্প কথা প্রচলিত আছে আসুন কৌটিল্যের দেশ ভক্তির স্বাদ আমরাও একটু আস্বাদন করার চেষ্টা করি।

একবার গ্রিক দার্শনিক মেগাস্থিনিস ভারত ভ্রমণে চন্দ্র গুপ্তের সভায় আসেন। তিনি কৌটিল্য পন্ডিতের সঙ্গে দর্শনের অভিলাষ নিয়ে চন্দ্র গুপ্তে কাছে তার ভাবনা ব্যাক্ত করেন।

তখন চন্দ্র গুপ্তের একজন অনুচর মেগাস্থিনিসকে সঙ্গে করে এক মেঠো রাস্তা ধরে জঙ্গলের এক কুটিরে নিয়ে যায়। কুটিরের মধ্যে প্রবেশ করলে দেখতে পান চাণক্য পন্ডিত বসে পুঁথি লিখছেন।

তখন করজোড়ে মেগাস্থিনিস কৌটিল্যকে নমস্কার করেন এবং বলেন হে আচার্য্য,আপনি হলেন অখন্ড ভারতের রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী।

আপনি চাইলেই তো রাজা চন্দ্রগুপ্ত আপনার জন্য অট্টলিকা বানিয়ে দেবেন,তাহলে আপনি কেন এই পর্ণ কুটিরে সন্ন্যাসীর ন্যায় জীবন কাটাচ্ছেন।

এর উত্তরে চাণক্য পন্ডিত জবার দেয় আমি যদি “দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায়,আমার জীবন অট্টলিকায় ব্যাতিত করি,তাহলে আমার দেশের প্রজাকে সারাজীবন পর্ণ কুটিরেই থাকতে হবে।”

চাণক্যের এরকম দেশভক্তি দেখে মেগাস্থিনিস বিস্মিত হয়ে কৌটিল্যের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলে,ধন্য আচার্য্য,আপনি সত্যিই অনন্য ধন্য আপনার দেশভক্তি।

কৌটিল্যের দেশভক্তি নিয়ে আরও একটি কাহিনী প্রচলিত আছে, একবার একজন চীনের নাগরিক চাণক্যের সাথে দেখা করতে আসেন।

চিনি নাগরিক কৌটিল্যের কুটিরে পৌঁছে দেখতে পান কৌটিল্য সন্ধ্যে বেলায় প্রদীপের আলোতে বসে পুঁথি লিখছেন। আর তার পাণ্ডুলিপির পাশে দুটি প্রদীপ আছে।

একটি প্রদীপ জ্বলছে, আর একটি প্রদীপ নেভানো আছে। কিন্তু সেই চিনি নাগরিককে দেখে কৌটিল্য তখন একটা প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে আর একটি প্রদীপ জ্বালালেন।

চিনি লোকটি তখন কৌটিল্যকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আচার্য্য আপনি তো একটি প্রদীপ জ্বেলে লিখছিলেন,সেই প্রদীপে তেলও ছিল। তবুও কেন আপনি ঐ প্রদীপটি নিভিয়ে,

নতুন করে আর একটি প্রদীপ জ্বালালেন। তাহলে এটা কি আপনার দেশের কোনো পরম্পরা। তখন কৌটিল্য পন্ডিত বললেন, আমি আগে যে প্রদীপ  এর আলোয় লিখছিলাম,

সেই প্রদীপ এবং প্রদীপের মধ্যে থাকা তেল ০২টি জিনিস ছিল আমার দেশের জনতার ট্যাক্সের টাকায় কেনা। তাই আমি দেশের প্রদীপ ও তেল দিয়ে দেশের কাজ করছিলাম।

কিন্তু আপনি যেহেতু আপনার ব্যক্তিগত কারণে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন,সুতারং আমি আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য দেশের সম্পতি ব্যবহার করতে পারিনা।

তাই আমি ঐ প্রদীপটিকে নিভিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি যে প্রদীপটি জ্বালিয়েছি সেই প্রদীপ এবং তার তেল দুটোই আমরা নিজের টাকায় কেনা তাই,এই প্রদীপটি আমার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছি।

এই গল্প শুনে আপনারা কৌটিল্যের দেশভক্তির আন্দাজ করতে পারছেন। কৌটিল্যের মধ্যে কোনো অরাজকতা কিংবা নিজস্বতার কোনো আশ্রয় ছিলনা। তিনি ছিলেন একজন দেশের ও রাজার বিশ্বস্ত সেবক।

০৫. বুদ্ধিমান লোক সর্বদা নিজের গোপনীয়তা গোদামে রাখে।” কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যেজন তার গোপনীয়তা তার নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারেনা,

সেই ব্যক্তির কখনো নিজের গোপনীয়তা গোপন করে রাখার ভরসা,অন্য কারো কাছ থেকে না করাটাই উত্তমের কাজ।

০৬. “প্রত্যেকটা সম্পর্কের মধ্যে একটা স্বার্থ থাকে।” বিনা স্বার্থে কোনো  সম্পর্ক স্থায়ী নয়। তাই চাণক্যের নীতিশাস্ত্রে বলা হয়েছে,সম্পর্ক গড়ার আগে প্রত্যাশী ব্যক্তির প্রত্যাশা

আন্দাজ করা উচিত। যদি ব্যক্তির প্রত্যাশার মধ্যে অশুভ চিন্তা থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির সঙ্গ ত্যাগ করাই উত্তম।

০৭. দুর্বল জায়গা কখনো প্রকাশ্যে আনা উচিত নয়।” কারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ সবাই নিতে চায়। তাই ফনি হীন সর্পের ন্যায় বিষ থাকুক আর না থাকুক,ফণা তোলা উচিত।

০৮. “মাছ ধরার জন্য জেলেকেও জলে নামতে হয়।” সুতরাং কোনো কার্য হাসিল করার জন্য রিস্ক নেওয়া দরকার।

০৯. চাণক্য নীতিশাস্ত্রে বলা হয়েছে “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” তাই সর্বদা সৎ মানুষের সঙ্গে বসবাস করা উচিত।

১০. “দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য হস্তী পালন করা কখনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।” মানুষকে তার চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ও সম্পত্তির সৎ ব্যবহার করা উচিত।

১১. কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে (Koutilya arthasastra) বলা হয়েছে বিদ্যা হল নির্ধনের ধন। তাই যোগ্য ব্যক্তিকে সর্বদা উচতি পদে আসীন করা উচিত।

“যথা চতুর্ভি কর্ণক পরীক্ষান্তে  নিঘর্ষণ ছেদনাতাপতান্ডবে:!                                                                 যথা চতুর্ভি পুরুষ: পরীক্ষান্তে তম্যেনে শিখনেন গুনেন কর্মণা:!

এই শ্লোকের তাৎপর্য এই যেমন স্বর্ণকার সোনার কণা পরীক্ষা করার জন্য ঘষে, ছেদন করে তাপিয়ে পরীক্ষা করে নেই আসল সোনা কিনা।

সেইরকম একজন প্রকৃত আসল পুরুষের পরীক্ষা,যোগ্য ব্যক্তিকে তার পদমর্যাদায় আসীন করার আগে,একজন স্বর্ণকারের ন্যায় তার গুণ,কর্ম  বিশ্লেষণ ও পরীক্ষার দ্বারা করা উচতি।

এছাড়াও কৌটিল্য তার অর্থ শাস্ত্রে পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে যে ০৪ টি নীতির কথার উল্লেখ করেছেন – ০১.সাম,০২.দান,০৩.দন্ড এবং ০৪.ভেদ।

সাম -অথাৎ সন্ধি বা মিত্রতার দ্বারা শত্রুকে জেতা,দান- সাহায্যের দ্বারা রাজার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে শত্রু দমন করা,দন্ড – অথাৎ যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রু দমন,ভেদ- অথাৎ রাজ্যের

অভ্যন্তরে অন্তঃকলহ বিবাদ সৃষ্টি করে,রাজ্যের মধ্যে সামগ্রিক ঐক্য নষ্ট করে শত্রুকে দমন করার মত মোক্ষম উপায় গুলি অবলম্বন করার কথা বলেছেন।

চাণক্যের মৃত্যু কিভাবে হল


চাণক্যের মৃত্যু নিয়ে এক চঞ্চলকার তথ্য পাওয়া যায়। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার,রাজপাট পুত্র বিন্দুসারের  হাতে তুলে দিয়ে শেষ বয়সে জৈন ধর্মে দীক্ষিত হয়ে সন্ন্যাস নিয়ে নেয়।

এরপর বিন্দুসার রাজা হলে চাণক্য আগের মত প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিন্দুসারকে পথ প্রদর্শন করাতে থাকে। পিতা চন্দ্র গুপ্তের ন্যায় পুত্র বিন্দুসারেরও  চাণক্যকের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ছিল প্রবল।

কিন্তু বিন্দুসারের সুবন্ধু নামের একজন অনুচরের চাণক্যের প্রতি বিন্দুসারের এই প্রেম বৎসল ভাব সহ্য হলোনা। তিনি বিন্দুসারকে ভুল বুঝিয়ে চাণক্য সমন্ধে একটি ভুল ধারণা পোষণ করতে লাগলেন।

আসলে ঘটনা কি হয়েছিল,যখন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য রাজা ছিলেন,তখন চন্দ্র গুপ্তের মিত্র অপেক্ষা শত্রুর সংখ্যাই বেশি ছিল। তাই চাণক্যের মনে আশঙ্কা ছিল,

চন্দ্র গুপ্তের খাবারে বিষ মিশিয়ে চন্দ্রগুপ্তকে হত্যা করা হতে পারে। তাই চাণক্য পন্ডিত শুরু থেকেই চন্দ্র গুপ্তের খাবারের মধ্যে একটু একটু করে বিষ মিশিয়ে খেতে দিতেন।

যাতে চন্দ্র গুপ্তের শরীর বিষক্রিয়া হলে সহ্য করতে পারে। কিন্তু একদিন চন্দ্র গুপ্তের সেই খাবার চন্দ্রগুপ্তের রানী মানে বিন্দুসারের মা দুর্ধরা ভুল করে চন্দ্র গুপ্তের খাবার খেয়ে নেয়।

কিন্তু দুঃভাগ্যের বিষয় তখন রানী দুর্ধরার পেটের মধ্যে বিন্দুসার ছিলেন। তাই কৌটিল্য রানী দুর্ধরাকে বাঁচাতে না পারলেও বিন্দুসারকে রানী দুর্ধরার পেট কেটে বার করে নেন।

আর রানী দুর্ধরা মারা যায়। এই ঘটনার বর্ণন সুবন্ধু বিন্দুসারের কানে ওঠায়, যে তোমার মায়ের মৃত্যুর জন্য কৌটিল্য পন্ডিত দায়ী।

পরে বিন্দুসার কৌটিল্য পন্ডিতকে অপমান করে এবং তার মায়ের খুনি বলে চাণক্যকে তিরস্কার করা হয়। তখন চাণক্য রাজপাট ত্যাগ করে নিজে বনের মধ্যে চলে যায়।

আর মনে,মনে সংকল্প নেয় আমৃত্য পর্যন্ত অন্ন জল গ্রহণ করবেন না। পরে বিন্দুসার অবশ্য তার ভুল বুঝতে পেরে চাণক্যকে ফিরিয়ে আনার জন্য যান,

কিন্তু কৌটিল্য আর ফিরে আসেন নি। তিনি বনের মধ্যে অনাহারে প্রাণ ত্যাগ করেন। আর এইভাবে ভারতবর্ষের একজন মহান রাষ্ট্রের নির্মাতা কৌটিল্য পন্ডিতের মৃত্যু হয়।

3.3/5 - (3 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here