বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ (Babri Masjid Demolition)

ভারতবর্ষের ইতিহাসে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা একটি আলোচিত বিষয়। তাই আপনারা যারা এখন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ পোস্টটি পড়ছেন,

তাদের সবাইকে জানিয়ে রাখি বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ বলুন আর বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনার যে ছবি আমাদের আর্টিকেলে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে তার কোনোটাই

আমাদের নিজস্ব অভিব্যক্তি বা নিজস্ব কোনো মতামত নয়। যার সবটাই পাবলিক ডোমেনে আগে থেকে উপলব্ধ আছে। তাই পাবলিক ডোমেনে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ হিসাবে

যে সমস্ত তথ্যগুলি দেওয়া আছে সেই তথ্যগুলির সংক্ষিপ্ত সার আপনাদের সুচনার্থে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যেম বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ হিসাবে তুলে ধরা হল।

আরো পড়ুন : দলাই লামার জীবনী। 

বাবরি মসজিদ তৈরির ইতিহাস


বাবরি মসজিদ তৈরির ইতিহাস হিসাবে ইতিহাসের পাতায় যেটুক তথ্য পাওয়া যায় তার সংক্ষিপ্ত সার হল এই যে- হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষের মতে,

ভগবান শ্রী রামের জন্ম হয় বর্তমান ভারতবর্ষের উত্তর প্রদেশের সরযূ নদীর তীরে অবস্থিত অযোধ্যা নগরে রাজা দশরথের জৈষ্ঠ্য পুত্র রূপে জন্ম গ্রহণ করেন।

অযোধ্যা নগরে ভগবান রাম তার সাম্রাজ্য স্থাপন করেন ও রাজত্ব করেন। পরে তার মৃত্যু হলে তার ভক্তরা অযোধ্যা নগরে তার জন্মস্থানে রাম মন্দির স্থাপন করেন এবং সেখানেই তিনি পূজিত হতে থাকেন।

১৫২৬ সালে সম্রাট বাবর ভারতে আসেন এবং দিল্লির মসনদে বসে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। পরে বাবরের একজন বিস্বস্থ সেনাপতি মীর বাকি ১৫২৮ সালে

অযোধ্যায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মীর বাকি দ্বারা নির্মাণ করা এই মসজিদ বাবরি মসজিদ নামে পরিচিতি পায়। স্থানীয় লোকের মতে এই মসজিদকে মসজিদে জন্মস্থান বলা হয়ে থাকে।

কিন্তু প্রশ্ন হল যে বিষয়টা নিয়ে এত কলহ বিবাদ সেটা হল একই জায়গায় মন্দির এবং মসজিদের অস্তিত্ব নিয়ে। যেই জায়গাটা নিয়ে এতো কলহ বিবাদ

সেই জায়গায় আদৌ কি মন্দির নির্মাণের আগে সেখানে মসজিদ ছিল ? আর যদি সেই জায়গায় মন্দির ছিল তবে মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরী করা হল কেন ?

আরো পড়ুন : মিশরের পিরামিডের রহস্য। 

বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদ


বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদের সূত্রপাত হয় ঊনিশের দশকে ব্রিটিশ রাজত্বকাল থেকে। ব্রিটিশদের রাজত্বে মুসলমানরা মসজিদের ভেতরে গিয়ে নামাজ পড়ত।

হিন্দুরা মসজিদের বাইরে একটা বেদি নির্মাণ করে সেই বেদিতেই ভগবান শ্রী রাম চন্দ্রের পূজা করে আসছিল। হিন্দুরা পূজার এই বেদিকে শ্রীরাম বেদি বলত।

১৮৫৩ সালে ব্রিটিশ রাজত্বকালে একবার বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদ নিয়ে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা হয়। সেইসময় পরিস্থিতি বিরূপ দেখে ব্রিটিশ সরকার মন্দির ও মসজিদের মাঝখানে

কাঁটা তারের বেড়া বসিয়ে দেয়। যার ফলে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেরা নিজেদের সীমানায় বাঁধা পড়ে যায়। এরপর থেকে হিন্দু ও মুসলমান কেও কারো সীমানায় যেতে পারতোনা।

১৮৫৫ সালে রাম বেদির পূজারী মাহান্ত রঘুবর দাস ফরিজাবাদ জেলা আদালতে একটা মুচলেখা দাখিল করেন। সেই মুচলেখায় জর্জ সাহেবের কাছে হিন্দুদের

পূজিত হয়ে আসা রাম বেদির উপর,রাম মন্দির বানানোর জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আদালত মাহান্ত রঘুবর দাসের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।

১৮৪৯ সালে মসজিদের মধ্যে রামের বাল্য মূর্তি রাখাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করে।

পরে ঘটনার গুরুত্ব আঁচ করে ফরিজাবাদ হাইকোর্ট পুরো মন্দির ও মসজিদের এরিয়াকে নিজেদের তত্বাবধানে নিয়ে নেয়। পরে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা

মসজিদ থেকে ভগবান শ্রী রামের বাল্য মূর্তি হটানোর আবেদন করলে,নতুন করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হওয়ার ভয়ে জেলা শাসক কে.আর নায়েক সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।

১৯৫০ সালে মাহান্ত রঘুবর দাস আরো একবার জেলা আদালতে মসজিদের ভিতরে যখন শ্রী রামের মূর্তি স্থাপন হয়ে গেছে তখন মসজিদের

ভিতরে ভগবান শ্রী রামের পূজা করার আর্জি জানালে হাইকোর্ট মাহান্ত রঘুবর দাসের এই আবেদন আরো একবার নাকচ করে দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে

পুরো মন্দির ও মসজিদ চত্বর এরিয়া সিল করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরফলে পুরো এরিয়া সিল হয়ে যায় এবং সেখানে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের উপাসনা স্থল বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৫৯ সালে নির্মোহী আখড়া ( ভারতে মোট ১৪ খানা আখড়া আছে,তার মধ্যে একটি হল নির্মোহী আখড়া) নিজেদের রামভক্ত দাবি করে আদালতে হলফনামা দাখিল করেন এবং

বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দিরের বিবাদিত জায়গায় যেখানে শ্রী রামের বাল্য মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল সেই জায়গায় রাম মন্দির বানানোর প্রস্তাব রাখেন।

১৯৬১ সালে মুসলিম ওয়াক্ত বোর্ড ( মুসলিম ওয়াক্ত বোর্ড হল মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি প্রতিষ্ঠান যারা মুসলিম সম্প্রদায়ের ওয়েল ফেয়ার রক্ষনা বেক্ষন করে থাকে )

আদালতে গিয়ে মোকদ্দমা দায়ের করেন মসজিদের পুরো দায়িত্বভার তাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক এবং হিন্দুদের পূজা ও অর্চনা সব বন্ধ করে তাদিকে বিবাদিত জায়গায় মসজিদ বানানোর অনুমতি দেওয়া হোক।

আরো পড়ুন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবনী। 

বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় রাজনৈতিক যোগ 


১৯৮৩ সাল পর্যন্ত বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক যোগ ছিলনা। বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদ ছিল শুধু স্থানীয় লোকেদের মধ্যে আপোষে।

১৯৮৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি অশোক সিংগালের নের্তৃত্বে সমগ্র হিন্দুদের আহ্বান করা হয়, ভারতবর্ষের যেখানে যেখানে মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরী করা হয়েছে

সেই সমস্ত জায়গাকে চিহ্নিত করে সেই জায়গায় মসজিদ ভেঙে নতুন করে হিন্দু দেবী ও দেবতাদের মন্দির তৈরী করা। তার মধ্যে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে

রাম মন্দির নির্মাণ করা ছিল অন্যতম। এরপর মন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ থেকে ঠিক করা হয় মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের লক্ষে তারা একটি রথযাত্রার আয়োজন করবে।

আর এই রথযাত্রার সূচনা করা হবে বিহারের সিতামরী থেকে। ১৯৮৪ সালের বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দ্বারা এটাই ছিল রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ইতিহাসের পাতায় বড় কোন আন্দোলন।

১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আকস্মিক মৃত্যু হলে সেই বছরের জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মন্দির বানানোর রথযাত্রা স্থগিত হয়ে যায়।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের দায়িত্ব সামলান তার পুত্র রাজীব গান্ধী। এইভাবে এক বছর কেটে যাওয়ার পর ১৯৮৫ সালে ২৩ শে অক্টবর দ্বিতীয় বার

রথযাত্রা আন্দোলনের নতুন করে রূপরেখা তৈরী করা হয়। ঠিক হয়ে যায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন ২৫ খানা আলাদা জায়গা থেকে রাম মন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে রথযাত্রা বার করা হবে।

১৯৮৬ সালে সাহাবানো মামলা কংগ্রেস শাসনকালে ঘটনায় নতুন মোড় নিয়ে আসে। সাহাবানো ছিলেন একজন মুসলিম মহিলা,যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়ে দিলে

সাহাবানো ভরণ পোষণ দাবি করে কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট সাহাবানোর স্বামীকে তার ভরণপোষণ বহন করার আদেশ দেয়।

তখন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মুসলিম সমাজের চাপের মুখে পড়ে সুপ্রিম কোর্টের জাজমেন্টের তোয়াক্কা না করে কোর্টের রায়ের বিপক্ষে গিয়ে সাহাবানোর বিপক্ষে বিল পাস করিয়ে নেয়।

সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নতুন করে বিল পাস করিয়ে নেওয়ায় বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন এই বিলের বিরোধিতা করে বলেন কংগ্রেস কোনো এক বিশেষ জাতিকে প্রাধান্যদিয়ে তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে।

পরে ইলেকশন সামনে এলে রাজীব গান্ধী হিন্দুদের খুশি করার জন্য ফরিজাবাদ আদালতের নির্দেশে হিন্দু ও মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়ে

যে বাবরি মসজিদ রাম মন্দির পুরোপুরিভাবে সিল ছিল,আদালতের সেই নির্দেশকে অমান্য করে রাজীব গান্ধীর নির্দেশে বাবরি মসজিদ রাম মন্দির সিল তালা খুলে দিয়ে দূরদর্শনে তার লাইভ সম্প্রসারণ করা হয়।

মন্দিরের দরজা খুলতে না খুলতেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। মুসলিম সংগঠনের লোকেরা মসজিদ পুনঃদখলের জন্য বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করে।

১৯৮২ সালে বিজেপি পার্টির গঠন হয়। সেই সময় বিজেপি পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন লাল কৃষ্ণ আদবানি। তখনকার দিনে রাজনৈতিক মঞ্চে বিজেপি পার্টির ততটা প্রভুত্ব ছিলনা।

বিধানসভায় বিজেপি পার্টির শুধু ০২ খানা সিট ছিল। বিজেপি পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদবানি ঠিক করেন তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত,

কিন্তু আলাদা করে রামমন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে একটি রথযাত্রার আয়োজন করবে। ১৯৮৯ সালে লখনউ আদালতের স্পেশাল বেঞ্চ ঠিক করেন

বাবরি মসজিদ রাম মন্দির নিয়ে যত মামলা আছে তার শুনানি একই সঙ্গে হবে। আর যতদিন পর্যন্ত বাবরি মসজিদ রাম মন্দির নিয়ে আদালত সুনিশ্চিত কোনো রায় দিচ্ছে ততদিন পর্যন্ত

বাবরি মসজিদ রাম মন্দির নিয়ে সমস্ত রকমের কাজ কর্ম স্থগিত থাকবে। ১৯৮৯ সালে নভেম্বর মাসে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য মন্দিরের ভূমি পূজন কার্যক্রম রাখেন।

প্রথমে সরকার ভূমি পূজনে সম্মতি না দিলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ভূমি পূজনের অনুমতি দেয়।

তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের এরকম সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের অন্দরমহলে অন্তদ্বন্দের সৃষ্টি হয়। ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধী তার নির্বাচনী প্রচার অযোধ্যা থেকে শুরু করেন।

কিন্তু বোফোর্স তোপ ঘোটালায় রাজীব গান্ধীর নাম জড়িয়ে পড়ায় রাজীব গান্ধী নির্বাচনে হেরে যায়। অপরদিকে কংগ্রেসের একজন প্রতিপত্তিবান নেতা ভি.পি সিং বোফোর্স তোপ

ঘোটালার জন্য নিজেকে কংগ্রেস থেকে টেনে বার করে ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টি গঠন করেন। ভি.পি সিং বিজেপির সঙ্গে জোট করে ৮২ টি আসন নিয়ে ন্যাশনাল পার্টির সরকার গঠন করেন।

১৯৯০ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর লাল কৃষ্ণ আদবানি রথযাত্রার সূচনা করে বাবরি মসজিদ ঘটনায় প্রথমবার রাজনৈতিক যোগ দেয়।

আদবানি রথযাত্রা গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে শুরু করে সমগ্র ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা হয়ে মোট  ১০,০০০ কিমি পথ সফর করে অযোধ্যায় গিয়ে শেষ হবে বলে স্থির হয়।

আদবানির এই রথযাত্রার একটাই উদ্দেশ্য ছিল অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ। আদবানির রথযাত্রায় রথের চাকা ধীরে ধীরে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় গড়াতে থাকে।

আদবানির রথযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে দেশ জুড়ে বিজেপি পার্টির কর্মী সমর্থক ক্রমশ বাড়তে থাকে। রথযাত্রার মধ্যে দিয়েই কেন্দ্রে যেখানে বিজেপি পার্টির শুধু মাত্র ০২ টি আসন ছিল সেই আসন বেড়ে গিয়ে ৮২ হয়ে যায়।

এইভাবে ১৯৯০ সালে ২৩ শে অক্টবর আদবানির রথযাত্রা একে একে বিভিন্ন রাজ্য ডিঙিয়ে বিহার রাজ্যে এসে পৌঁছালে বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব আদবানির রথযাত্রা থামিয়ে দেয়।

আদবানির এই রথযাত্রা যে সমস্ত জায়গা দিয়ে যাচ্ছিল সেখানে কোনো না কোনো জায়গায় ছোট খাটো দাঙ্গার খবর উঠে আসছিল,তাই লালু প্রসাদ যাদব বিহারে

লাল কৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা এসে পৌঁছালে,রথযাত্রায় বাধা দেয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এড়ানোর ভয়ে বিহার পুলিশ প্রশাসন দ্বারা লাল কৃষ্ণ আদবানীকে গ্রেফতার করা হয়।

আদবানির এই রথযাত্রা বিহারে ২৩ শে অক্টবর বাধা পায় আর ৩০ শে অক্টবর এই রথযাত্রা বিহার সহ আরো অন্যান্য জায়গা হয়ে অযোধ্যায় পৌঁছানোর কথা ছিল।

কিন্তু আদবানির রথযাত্রা সম্পন্ন না হলেও আদবানি রথযাত্রা দ্বারা মানুষের মনে রাম মন্দির নির্মাণের বীজ পুঁতে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সবদিক বিচার করে দেখতে গেলে এই রথযাত্রা দ্বারা বিজেপি পার্টি তথা আদবানি রাম মন্দির নির্মাণকে ঘিরে বিশাল জনমত তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিল। যাইহোক আদবানির রথযাত্রা বিহারে পৌঁছে

স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বিজেপি ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির ৮২ আসনের জোট থেকে তাদের সমর্থন সরিয়ে নেয় এবং কেন্দ্রে ভি.পি সিং এর ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির সরকার ভেঙে যায়।

অপরদিকে লাল কৃষ্ণ আদবানির রাম মন্দিরের রথযাত্রা পৌঁছানোর কথা ছিল ৩০ শে অক্টবর তাই আগে থেকেই অযোধ্যায় বিজেপির বহু কর্মী সমর্থক ভিড় জমাতে শুরু করে,

বাবরি মসজিদে হামলা করার চেষ্টা করে। কিন্তু তৎকালীন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব বাবরি মসজিদে হামলা করলে পুলিশকে গুলি চালানোর আদেশ দেয়।

পুলিশের গুলিতে সেদিন বিজেপির বহু কর্মী সমর্থক মারা যায়। ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন অযোধ্যা থেকে।

কিন্তু দুভাগ্যের বিষয় শ্রীলংকার জঙ্গি সংগঠন এল.টি.টি দ্বারা রাজীব গান্ধীকে হত্যা করা হয়। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর সমবেদনাকে কাজে লাগিয়ে

কংগ্রেস সেবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী হয় পি.ভি নরসিমহা রাও। অপরদিকে সেবার উত্তর প্রদেশে ৪২৫ টি আসনের মধ্যে ২২১ টি আসন নিয়ে বিজেপি জয়ী হয়।

উত্তর প্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হয় কল্যাণ সিংহ। মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহ উত্তর প্রদেশে পর্যটন শিল্পের অজুহাতে জমি অধিগ্রহণ করা শুরু করে। পরে সেই অধিকৃত জমি

রাম জন্মভূমি ট্রাস্টকে লিজে দিয়ে দেওয়া হয়। জমি লিজে দিতে না দিতেই এলাহাবাদ হাইকোর্ট কল্যাণ সিংহ দ্বারা অধিকৃত জমির উপর Permanent Construction উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি.ভি নরসিমহা রাও বাবরি মসজিদ রাম মন্দির মামলা আপোষে নিষ্পাদন করার জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং মসজিদ অ্যাকশন কমিটিকে গোলটেবিল বৈঠকে ডাকা হয়।

কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিতর্কের সমস্যা সমাধান বৈঠক ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হয়ে উঠেনি।

আরো পড়ুন : সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবনী। 

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ


১৯৯২ সালের ৩০ শে অক্টবর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ,রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক এবং বজরং দলের মধ্যে একটি মিটিং হয় সেই মিটিঙে ঠিক করা হয় সবাই মিলে একসাথে অযোধ্যায় কারসেবা করবে।

আবার অনেকের মতে অযোধ্যায় কারসেবার নামে বাবরি মসজিদ হামলা বা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ ছিল আগে থেকেই পূর্ব পরিকল্পিত একটা বিষয়।

আই.বি.-র প্রাক্তন ডাইরেক্টর তার লেখা বইয়ে উল্লেখ করেছেন বাবরি মসজিদ হামলা,বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণের সূচনা প্রধানমন্ত্রী পি.ভি নরসিমহা রাওকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু সমস্ত কিছু জেনে বুঝে প্রধানমন্ত্রী পি.ভি নরসিমহা রাও আগে থেকে কোনো বড় পদক্ষেপ না নেওয়া হল  নরসিমহা সরকারের কাছে বড় একটা প্রশ্ন ?

প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাওকে অনেকে তখন উত্তর প্রদেশ থেকে বিজেপি শাসনের অবসান করে রাস্ট্রপতি শাসন জারি করার পরামর্শ দেন,কিন্তু নরসিমহা রাও এব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কারসেবা করার নামে অযোধ্যায় অযথা ভিড় একত্রিত হলে অযোধ্যায় শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে বলে বিভিন্ন সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে পিটিশন জমা দেয়।

অপরদিকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে জানিয়ে দেয় অযোধ্যায় বাবরি মসজিদে হামলা হলে তার সমস্ত দায় ভার কল্যাণ সিং তার মাথায় নিয়ে নেবে।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দ্বারা ঠিক করা হয় কারসেবকরা কার সেবা করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বেচ্ছায় একমুঠো করে বালি এবং ইঁট নিয়ে একত্রিত হবে। ইঁট এবং বালি দিয়ে

বাবরি মসজিদ রাম মন্দিরের স্থানে যেখানে রাম বেদি আছে সেখানে গিয়ে কারসেবা করার পর যে যার জায়গায় ফেরত যাবে এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে হলফ নামা জমা করা হয়।

এই হলফনামার পরিপেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় কার সেবকদের কার সেবা করার অনুমতি দেয় তাছাড়া  মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সংসদে তার ভাষণে বাবরি মসজিদে হামলা হলে তার দায়ভার নেওয়ার কথা বলেন।

আরো পড়ুন : পুরুলিয়া হাতিয়ার কান্ড। 

বাবরি মসজিদ হামলা


১৯৯২ সালের ০৬ ডিসেম্বর কার সেবা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই লাখে লাখে অনেক মানুষ কার সেবা করার নামে

অযোধ্যায় একত্রিত হতে শুরু করছিল। পরিস্থিতি বুঝে পুরো অযোধ্যা শহর নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে পুলিশ ছিল অত্যন্ত সীমিত।

পুলিশ প্রশাসনের আদেশ ছিল কার সেবা স্থলে কোনো রকমের ছেনি,হাতুড়ি,শাবল,গাঁইতি এই ধরণের উপকরণ নিয়ে যাওয়া যাবেনা।

কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের আদেশ উপেক্ষা করে সকল কার সেবক হাতে করে ছেনি,হাতুড়ি,শাবল,গাঁইতি এসব নিয়ে হাজির হয়েছিল।

পুলিশ প্রশাসনের বিধি নিষেধ অমান্য করে কিভাবে জনতা এইসব ছেনি হাতুড়ি নিয়ে পৌঁছেছিল সেটাই ছিল পুলিশ প্রশাসনের কাছে বড় একটা প্রশ্ন।

পুলিশও নিরুপায় ছিল,কারণ আগে থেকেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং আদেশ দিয়েদিয়েছিল কোনো মতেই কারসেবা করতে আসা মানুষজনের উপর গুলি চালানো যাবেনা।

অযোধ্যায় কারসেবা করার জন্য ১৯৯২ সালের ০৬ ডিসেম্বর দিন ধার্য্যকরা হয়েছিল,কারসেবা সভাস্থলে তিল ধরার জায়গা পর্যন্ত ছিলনা।

সকাল থেকেই মঞ্চে চলছিল বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের ভাষণ। সকাল ১০ টার মধ্যে এসে পৌঁছায় বিজেপি সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদবানি,মরুলী মনোহর যোশী এবং উমা ভারতীর মত প্রথম সারির নেতারা।

সভাস্থলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ,বিজেপি,আর.এসএস এবং শিব সেনার সমর্থক ছিল দেখার মত। উমা ভারতী,মুরলী মনোহর যোশী প্রমুখ নেতাদের কনভয়ের উপর পুলিশের নজর ছিল।

পুলিশের ধারণা ছিল এই সমস্ত নেতারা মঞ্চে গিয়ে ভাষণ দিতে গেলে সভাস্থলে সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ভঙ্গ হতে পারে। এও শোনা যায় উমা ভারতী নেড়া মাথা করে সভাস্থলে ছদ্মবেশে পৌঁছেছিলেন।

এতক্ষন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ঠাক চলছিল নেতারা মঞ্চে তাদের বক্তব্য রাখছিলেন। সকাল ০৭ টা নাগাদ অযোধ্যায় ভূমি পূজন হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু হঠাৎ করে সকাল ১১:৩০ নাগাদ কার সেবকদের ভিড়ের বড় একটি অংশ বাবরি মসজিদে হামলা করে দেয়। ভিড়ের একটি অংশ বাবরি মসজিদের গম্বুজের উপরে ছেনি,হাতুড়ি নিয়ে চড়াও হয়ে যায়।

বাবরি মসজিদ হামলা সমস্ত কিছু হচ্ছিল পুলিশ প্রশাসনের সামনে,কিন্তু উন্মত্ত জনসমুদ্রে পুলিশের হাত পা ছিল বাঁধা তাই নীরব দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলনা।

বাবরি মসজিদের প্রথম গম্বুজ বেলা ০১:৫০ নাগাদ ভেঙে পড়ে। সভাস্থলের মঞ্চ থেকে বক্তারা উত্তেজিত জনতাকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার মিনতি করতে থাকে।

কিন্তু জনতার কোলাহলে মঞ্চের সেই আওয়াজ জনতার কানে পৌঁছায় না। বিকেল ০৩:৩০ নাগাদ একইভাবে দ্বিতীয় গম্বুজ ভেঙে পড়ে,

আর এইভাবে ধীরে ধীরে মসজিদের মূল গম্বুজ ভেঙে পড়ে। এই ভাবে ধীরে ধীরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস স্তূপে  পরিণত হয়। সেইদিন সন্ধে হতে না হতে

কার সেবকরা বাবরি মসজিদের ধ্বংস স্তুপের উপর রাম জন্মভূমি স্থলে ছোট টাপুর মত করে মন্দির নির্মাণ করে ভগবান শ্রী রামের মূর্তি স্থাপন করে দেয়।

১৯৯২ সালে যোগাযোগ বলতে রেডিও,দূরদর্শন ছাড়া কিছুই ছিলনা কোনো মোবাইল ব্যবস্থা,ছিলনা কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফ্রম

তাই তাৎক্ষণিক ভাবে একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে খবর পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগত। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কার্যালয়ে ল্যান্ড লাইন টেলিপোরিসেবা দ্বারা খবর পৌঁছায়।

গতিক অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সরকারি আমলাদের দ্বারা ঘটনাস্থলের নিয়মিত গ্রাউন্ড রিপোর্ট নিতে থাকেন।

বাবরি মসজিদে হামলা এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের খবর কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী পি.ভি নরসিমহা রাও এর কাছে গিয়ে পৌঁছায়। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের খবর ধীরে ধীরে ভারতের সর্বত্র পৌঁছে যায়।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। একে একে প্রথমে অযোধ্যা,তারপর ভোপাল,দিল্লী থেকে শুরু করে দেশের আরো অন্যান্য জায়গায় দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়।

এরপর উত্তর প্রদেশ সরকার এবং কেন্দ্র সরকার একসাথে অ্যাকশন মুডে আসে। ১৯৯২ সালের ০৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যেবেলা উত্তর প্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।

সন্ধে ০৬ টার মধ্যে কল্যাণ সিং রাজ্যপালের কাছে তার পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে বাবরি মসজিদ হামলার পুরো দায় ভার নিজের মাথার উপর নিয়ে নেয়।

বাবরি মসজিদ হামলার পর দাঙ্গার বাতাস পুরো আকাশ বাতাসে মহামারীর ন্যায় ছড়িয়ে পরে। সরকারের কাছে তখন মুখ্য সমস্যা হয়ে আসে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।

সরকার হিন্দু ও মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা গুলোকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে সেই সব জায়গায় বেশি বেশি করে লোকাল পুলিশ এবং আধাসেনা মোতায়েন করা হয়।

ভারতবর্ষের দাঙ্গার আঁচ ভারতের সীমানা পেরিয়ে দাঙ্গার আঁচ পাকিস্তান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পাকিস্তানে বহু হিন্দুদের ঘর বাড়ি দোকান পাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশেও একই অবস্থা চোখে পড়ে,সেখানেও হিন্দু পরিবার গুলির উপর অত্যাচার শুরু হয়। বাংলাদেশে ১২ টির কাছাকাছি মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়।

বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিতর্ক ইউ.এন.ও. এর মঞ্চে তোলা হয়,লাহোরে ভারতের দূতাবাস সহ এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে হামলা করা হয়।

বাবরি মসজিদ রাম মন্দির দাঙ্গায় ২০০০ লোক মারা যায়। এই দাঙ্গায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সমস্ত রকমের ব্যবসা বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মহারাষ্টের বোম্বেতে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গায় ১০০০ মানুষের প্রাণ হানি হয়ে যায়। বোম্বেতে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার রাশ কাটতে না কাটতে ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন

দাউদ ইব্রাহিম দ্বারা বোম্বায়ের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বোম্ব ব্লাস্ট করার ফলে ২০০-র কাছাকাছি নিরীহ মানুষের প্রাণ নাস হয়ে যায়।

আরো পড়ুন : নবীন ময়রার রসগোল্লা আবিষ্কারের গল্প। 

লিব্রাহান কমিশন


বাবরি মসজিদ হামলার পরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ ও প্রয়োজনীয় অপরাধ দমন মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উচ্চস্তরীয় অনুসন্ধানের জন্য লিব্রাহান কমিশন গঠন করা হয়।

অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করা হয় জর্জ যাস্টিক লিব্রাহান কে। তাই এই অনুসন্ধান কমিটির নাম রাখা হয় লিব্রাহান কমিশন

লিব্রাহান কমিশন ই একমাত্র কমিশন ছিল যে কমিশন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ অনুসন্ধানের জন্য অনুসন্ধানের সময়সীমার মেয়াদ ৪৮ বার বাড়িয়ে ছিলেন

লিব্রাহান কমিশন পুরো বাবরি মসজিদ হামলা মামলা অনুসন্ধান করার জন্য সব মিলিয়ে ১৭ বছর সময় নেয়। লিব্রাহান কমিশন দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণ ও

বাবরি মসজিদ হামলার রিপোর্ট সংসদের অধিবেশনে পেস করা হয়। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় ৬৮ জনকে দোষী সাবস্ত করা হয়।

বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় দোষীর তালিকায় বিজেপি নেতা লাল কৃষ্ণ আদবানি,মুরলী মনোহর যোশী,অটল বিহারি বাজপেয়ী সহ আরো অন্যান্য নেতাদের নাম জড়িয়ে যায়।

এই সবের মধ্যে প্রধান অপরাধী হিসাবে তৎকালীন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক এবং বিজেপি পার্টিকে মুখ্য অপরাধী হিসাবে তালিকার শীর্ষে রাখা হয়।

কিন্তু বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের সাফাই ছিল তারা শুধু নির্দিষ্ট ভাবে আংশিক দায়ী নয়,তাদের বাইরে আরো অন্যন্য সংগঠন সহ কেন্দ্র সরকার সমানভাবেই দায়ী।

তাদের মতে লিব্রাহান কমিশন বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবককে একতরফা দোষী সাবস্ত করার চেষ্টা করছে আর কেন্দ্র সরকারকে অপরাধের দায়রা থেকে দূরে রাখা হচ্ছে।

বাবরি মসজিদ রায়


বাবরি মসজিদ রায় নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০০৩ সালে Archaeological Survey of India কে বাবরি মসজিদ রাম মন্দিরের বিবাদিত জায়গায়

খনন কার্য চালিয়ে Historical Excavations করার জন্য বলেন, যাতে করে বাবরি মসজিদ রাম মন্দিরের ঐতিহাসিক সত্যতা যাচাই করা যেতে পারে।

এরপর এলাহাবাদ কোর্টের রায় মত Archaeological Survey of India বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদিত এলাকায় প্রায় ০৪ মাস ধরে খনন কার্য চালানোর পর

অগাস্ট মাসে Survey- র রিপোর্ট তুলে ধরেন। Archaeological Survey of India তার রিপোর্টে বলেন বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদিত এলাকায় খনন কার্য চালিয়ে

যে সমস্ত পিলার গুলি পাওয়া গেছে,সেই সমস্ত পিলার গুলিতে হিন্দুদের বিভিন্ন দেবী দেবতার চিত্র খোদাই করা আছে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মসজিদের গায়ে

এরকম দেবী দেবতা পশু ও পাখির দেবতার চিত্রায়িত করা নিষেধ। তাই Archaeological Survey of India স্বীকার করে নেয় বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদিত জায়গায় যে সমস্ত পিলার গুলি

পাওয়া গেছে সেই পিলার গুলি হিন্দু ধর্মের প্রতীকী বহন করছে আর এই সমস্ত পিলার গুলি হিন্দু ধর্মেরই ছিল। Archaeological Survey of India মতে যে সমস্ত পিলার গুলি সেখান থেকে পাওয়া গেছে

সেগুলি ছিল বাবরি মসজিদ নির্মাণের বহু আগের। Archaeological Survey of India এর অনুমান ওখান থেকে পাওয়া পিলার গুলি আনুমানিক দশম থেকে একাদশ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়েছিল।

তবে Archaeological Survey of India সরাসরি ঐ বিবাদিত জায়গায় রাম মন্দির ছিল বলেও স্বীকার করেন নি। Archaeological Survey of India এর মতে

ঐ বিবাদিত জায়গায় প্রাচীন আটচালা মন্দির ছিল এবং সেখানে বিভিন্ন দেব দেবীর পূজা করা হত। তবে Archaeological Survey of India রিপোর্ট নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মত বিভেদ আছে।

বহুপূর্বে ব্রিটিশ রাজত্বকালে বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিবাদিত এলাকায় খননকার্য চালানো হয়েছিল তাতে সেখানে বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মের স্মৃতি সৌধ পাওয়া যায়

তাই বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দিরের বিবাদিত জায়গা আসলে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জায়গা।

মসজিদ ধ্বংসের কারণ 3

Archaeological Survey of India-র তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বক্তব্য হল যখন বাবরি মসজিদ রাম মন্দিরের বিবাদিত জায়গায়

যে সমস্ত পিলার ও স্মৃতি স্তম্ভ গুলি পাওয়া গেছে তাতে হিন্দু দেব দেবীর চিহ্ন আছে তখন সে জায়গায় মন্দিরের আগে কোনো মসজিদ ছিলনা সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকছে না।

তবে Archaeological Survey of India এটাও স্পষ্ট করেনি যে ঐ জায়গায় যে দুটো সমাধি পাওয়া গেছিল সেই সমাধি দুটো হিন্দু না মুসলিম ধর্মের সমাধি সেটাও স্পষ্ট করেনি।

আরো পড়ুন : স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা। 

মন্দির বানানোর পক্ষে মতামত


০১. হিন্দু ধর্মালম্বীদের মতে Archaeological Survey of India তার রিপোর্টে যখন স্পষ্ট করে দিয়েছে বিবাদিত জায়গায় যখন মন্দির ছিল তখন সেখানে মন্দির বানানো উচিত।

০২. মুঘল রাজত্বকালে কিছু ইউরোপীয় পর্যটক ভারত ভ্রমণে আসেন তারা তাদের ডকুমেন্টরিতে বাবরি মসজিদ যেখানে নির্মিত হয়েছে সেই জায়গায় মন্দির ছিল বলে উল্লেখ করে লিখেছেন

অযোধ্যায় একটা মন্দিরকে ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তাদের এই মন্দির নিয়ে মতান্তরে ঐ মন্দির বাবর আবার কারো মতে ঔরঙ্গজেব ধ্বংস করেছিল।

তারা তাদের ডকুমেন্টারিতে উল্লেখকরেছেন মন্দিরের ভেঙে পরে মসজিদ নির্মিত হলে স্থানীয় লোকেদের মুখে সেই জায়গার নাম পরে যায় মসজিদে জন্মস্থান

০৩. হিন্দুরা তাদের আস্থা বজায় রেখে মন্দির ভাঙার পরে বাবরি মসজিদের পাশে হিন্দুরা রাম বেদি তৈরী করে কয়েক দশক ধরেই ভগবান শ্রী রামের পূজা করে আসছে।

হিন্দুরা যখন এতদিন ধরেও তাদের মান্যতা ছাড়েনি আর মসজিদের জায়গায় যখন মন্দিরের বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে তখন সেখানে মন্দিরের অস্তিত্ব থাকছেনা সুতারং সেখানে মন্দির তৈরী হওয়া উচিত।

মসজিদ বানানোর পক্ষে মতামত


০১. মুসলমান ধর্মালম্বীদের মতে Archaeological Survey of India যদিও মসজিদের স্থানে মন্দির ছিল বলে স্পষ্ট করলেও সেখানে রাম মন্দির ছিল বলে স্পষ্ট করেনি তাই সেটা রাম জন্মভূমি বলা যাবেনা।

০২. মুসলমান ধর্মালম্বীরা এও দাবি করেন যে,যেই আমলে মসজিদ তৈরী করা হয়েছিল সেই সময় মসজিদ স্থানীয় কারিগর দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল।

তাই লোকাল কারিগররা সেই আমলে মসজিদ বানানোর কারুকার্য জানতনা তাই তারা হিন্দু মন্দিরের আদলে মসজিদ নির্মাণ করেছিল।

০৩. ১৫৭৬ সালে তুলসী দাস তার রচিত রাম চরিত মানস অযোধ্যায় থেকে রচনা করেন। সুতরাং যদি সত্যিই অযোধ্যায় রাম মন্দিরের জায়গায় কোনো মন্দির থেকে

থাকত তাহলে কবি তুলসী দাস অবশ্যই তার রচনায় রাম মন্দিরের উল্লেখ করত। অথচ তুলসী দাস রাম চরিত মানসে সেরকম কিছুই তিনি উল্লেখ করেননি।

 ০৪. বাবরি মসজিদ হল ভারতের ৪৬০ বছরের একটি প্রাচীন ভাস্কর্য হিসাবে অযোধ্যায় দাঁড়িয়ে ছিল সুতারং বাবরি মসজিদের একটি ঐতিহাসিক মূল্য আছে।

তাই বাবরি মসজিদ ধ্বংস বাবরি মসজিদ হামলা কোনো মতেই মেনে নেওয়া যায়না,বাবরি মসজিদের সাথে ভারতের মুসলমানদের আস্থা জড়িয়ে আছে সুতরাং বাবরি মসজদি পুনঃনির্মান হওয়া উচিত।

পরিশিষ্ট


ইতিহাসের বাবরি মসজিদ ধ্বংস,বাবরি মসজিদ হামলা এবং বাবরি মসজিদ হামলার ঘটনা একটি আলোচিত বিষয়। বাবরি মসজিদ রাম মন্দির আদালতের রায় যায় আসুকনা কেন

বাবরি মসজিদ হামলার ঘটনা,বাবরি মসজিদ তৈরির ইতিহাস নিয়ে সামান্য আলোচনার মাধ্যমে আসল ইতিহাস অবগত করার একটা ছোট প্রচেষ্টা করা হল আসা করি আপনাদের ভালো লেগেছে,ধন্যাবাদ।

2.7/5 - (4 votes)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here