টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য।

প্রিয় পাঠকগণ আজকে আমরা কথা বলব টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য নিয়ে। টাইটানিক জাহাজটি ছিল ঊনিবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনের তৈরি একটি বিলাস বহুল জাহাজ।

মাঝ সমুদ্রে বরফের পাহাড়ের সাথে টাইটানিকের ধাক্কা লেগে টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার দুঃঘটনা ঘটে। আমাদের আলোচনায় আপনাদিকে টাইটানিক কিভাবে ধ্বংস হয়েছিল ?

টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা,টাইটানিক জাহাজ কিভাবে ডুবল ? টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য ও গল্প কথা বলা হবে।

টাইটানিক জাহাজ নির্মাণ ব্রিটিশ দ্বারা কেন করা হয়েছিল ? টাইটানিক জাহাজ দুঃঘটনা কেন ঘটেছিল ? এই দুঃঘটনার জন্য আসলে কে দায়ী ছিল ?

আপনাদের মনে টাইটানিক (Titanic) কে নিয়ে থাকা সমস্ত জিজ্ঞাসার অন্ত করার চেষ্টা করা হবে টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য গল্প কথার মাধ্যমে।

টাইটানিক জাহাজ নির্মাণের প্রেক্ষাপট 


টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য গল্প কথা প্রসঙ্গে আপনাদের সামনে প্রথমে যেটা তুলে ধরা হবে সেটা হল,টাইটানিক জাহাজ নির্মাণের প্রেক্ষাপট।

টাইটানিক জাহাজের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ঊনিশের দশকে আজ থেকে ১০০ বছর আগে। তখন ব্রিটেন সহ বিভিন্ন পাশ্চ্য়ত্য দেশগুলোতে নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল।

টেকনোলোজীতে একটা দেশ আর একটা দেশকে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমানোর জন্য একমাত্র জল পথই ছিল প্রধান ভরসা।

যদিও তখন বজরা,নৌকা ও ছোটো জাহাজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েগেছিল, কিন্তু সেই সমস্ত ছোট সামুদ্রিক জাহাজে করে একদেশ থেকে অন্য দেশে বাণিজ্যিকভাবে পাড়ি জমানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।

তাছাড়া ছোট জাহাজে করে ব্রিটেন থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমানো ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্রবক্ষে ওঠা সামুদ্রিক ঝড় এবং অপ্রত্যাশিত জলোচ্ছাস ছোট ও মাঝারি জাহাজের পক্ষে মুখ্য বাঁধা ছিল।

তখনকার দিনে ব্রিটেন থেকে অ্যামেরিকা পাড়ি দিতে জলপথে প্রায় ০৬ দিন সময় লাগত। সমুদ্রপথে বড় বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় ও নোনা জলে,

যাত্রীদের বমি ও পায়খানার মত নানা সমস্যা লেগেই থাকত। এক কথায় সমুদ্র যাত্রা ছিল খুবই পীড়াদায়ক। আর তখনকার দিনে সামুদ্রিক যাত্রার জন্য,

সেরকম বিলাস বহুল কোনো সামুদ্রিক জাহাজ ছিল না। তাই ব্রিটেন সরকার চাইছিল ঊনিবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় একটি আধুনিক বিলাস বহুল যাত্রীবাহী জাহাজ তৈরী করে,

বিশ্বের দরবারে নিজেদের নাম দায়ের করতে। ব্রিটেন সরকারের স্বপ্ন ছিল একটা আধুনিক শৌখিনতম যাত্রীবাহী  ড্রিম শিপ তৈরি করা।

তারা এমন একটি জাহাজ তৈরি করতে চাইছিল,যে জাহাজটা হবে অতি সুন্দর ও শৌখিনতম। জাহাজটির সোন্দর্য্য এমন হবে যে জাহাজের সৌন্দর্য দেখে সাধারণ মানুষের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাবে।

জাহাজটির বিলাসিতা কোনো সাত তারা হোটেল থেকে কোনো অংশে কম হবেনা। জাহাজের সৌন্দর্য দেখে কবি তার ভাষা হারিয়ে ফেলবে। মোট কথা,যেটা সত্যি সত্যি সামুদ্রিক ঝড় ও ঝাপটা সামাল দিয়ে,

সমুদ্রের বুক চিরে শিকারীর তীরের ন্যায় নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। আর সব থেকে বড় কথা যে জাহাজটি কোনো দিন ডুববেনা!

জাহাজটি নি:ঝঞ্জায় সমুদ্রের বুকে দাপিয়ে রাজত্ব করবে। যে জাহাজ তৈরি করার প্রধান উদ্দেশ্য হল সমুদ্রের বুকে দাপিয়ে রাজত্ব করবে,সে হবে সমুদ্রের বেতার বাদশা।

আরো পড়ুন : ২০২১ এর সেরা ঈদের শুভেচ্ছা কবিতা স্ট্যাটাস এস এম এস বাংলা। 

টাইটানিক জাহাজের নাম টাইটানিক রাখা হল কেন ?


টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য গল্প কথায় এবারে আপনাদের বলব টাইটানিক জাহাজের টাইটানিক নামকরণ করণের কাহিনী।

এরপর ব্রিটেন সরকার ব্রিটেনের এক নামি জাহাজ নির্মাণক সংস্থা White Star line কোম্পানিকে জাহাজ নির্মাণের শর্তে ব্রিটেন গভমেন্ট,

০১ কোটি ডলার ঋণ দেয়,একটি বিলাস বহুল যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণের জন্য। White Star line কোম্পানি ১৯০৮ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বর হল্যান্ডের বেলফাস ডকে,

জাহাজ নির্মাণের জন্য বরাদ পেস করে। এরপর টাইটানিকের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯০৯ সালের ৩১ সে মার্চ থেকে। টাইটানিক জাহাজটি নির্মাণের জন্য,

Untitled design 2 1

৩০০০ এর বেশি শ্রমিক এবং ইঞ্জিনিয়ার রাত দিন কাজ করেছিলেন। টাইটানিকের নির্মাণকালে ২৫০ এর বেশি শ্রমিক কাজ করার সময় ঘায়েল ও দুঃঘটনার স্বীকার হয়ে মারা যায়।

টাইটানিকের নির্মাণে ০৩ বছর সময় লেগে যায়। ১৯১২ সালের ০২ এপ্রিল টাইটানিকের নির্মাণ পুরো হয়ে যায়। সেই সময় টাইটানিকের নির্মাণে খরচ হয়েছিল ৭৫ লক্ষ US ডলার। 

এই সুন্দর ও সুবিশাল অট্টলিকা সম জাহাজটির নামকরণ নিয়ে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। আগেকার দিনে গ্ৰীক সংষ্কৃতিতে টাইটান ছিলেন নির্মাণের দেবতা।

জাহাজটির বিশালতা ও সৌন্দর্যায়ন দেখে জাহাজটির নাম রাখা হয় গ্রীকদের নির্মাণের দেবতা টাইটানের নাম অনুসারে টাইটানিক। টাইটানিকে আমরা সাধারণত টাইটানিক নামে চিনি। 

কিন্তু টাইটানিকের আর একটা আলাদা নাম আছে। টাইটানিকের পুরো নাম হল RMS Titanic. RMS এর পুরো নাম হল Royal Mail Ship .

টাইটানিকের যাত্রা পথ (Titanic route between England to New york)


টাইটানিক জাহাজের ডুবে যাওয়ার রহস্য গল্প কথায় এবারে আপনাদের টাইটানিক জাহাজের যাত্রা পথের বিবরণ দেওয়া হবে।

১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল টাইটানিককে হল্যান্ডের বেলফাস ডক থেকে টাইটানিককে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দরে নিয়ে আসা হয়।

ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দরগাহ থেকে White Star line কর্তৃপক্ষ টাইটানিকের যাত্রা পথ ঘোষণা করেন। ঘোষণা করা হয় RMS Titanic ইংল্যান্ড থেকে আয়ারল্যান্ড এবং ফ্রান্স হয়ে নিউইয়র্কে পৌঁছাবে।

এরপরই RMS Titanic এর ঐতিহাসিক যাত্রার স্বাক্ষী হয়ে থাকার জন্য টাইটানিকের টিকিট সংগ্রহের ধুম পরে যায়। স্বপ্নের জাহাজ টাইটানিককে দেখার জন্য,

সকাল থেকেই সাউদাম্পটন বন্দরে মানুষের ভিড় জড়ো হয়ে যায়। খবরের শিরোনামে চর্চার প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে RMS Titanic.

টাইটানিকের ঐতিহাসিক যাত্রার স্বাক্ষী হয়ে থাকার জন্য ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দরে লক্ষাধিক মানুষ এসে ভিড় জমায়।

টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীতে যাত্রা করার জন্য  টিকিটের মূল্য ছিল ০২,৯০,০০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকিটের মূল্য ছিল ০১,১৬,০০০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণীর টিকিটের মূল্য ছিল ২,০০০ টাকা।

টাইটানিক বেলা দুপুর নাগাদ ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে নিউয়র্কের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। উচ্ছাল সমুদ্রের বুক চিরে টাইটানিক তার সর্বোচ্চ ৪২ কিমি গতিবেগে নিউইয়র্ক এর উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে থাকে।

পরের দিন সন্ধে বেলা RMS Titanic ফ্রান্সের চেরবার্গ বন্দরে গিয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে ২৪৭ জন যাত্রী নিয়ে টাইটানিক আয়ারল্যান্ডের কুইন টাউন বন্দরে এসে পৌঁছায়।

এরপর কুইন টাউন বন্দরে আরো ১২৩ জন যাত্রীকে সঙ্গে করে টাইটানিক তার অন্তিম গন্তব্যস্থল নিউয়র্কের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।

জাহাজে ৮৮০ জন ত্রু-মেম্বার সহ মোট ২,২২৪ জন যাত্রীকে সঙ্গে করে টাইটানিকে যাত্রা করছিল। কিন্তু তাদের কেও কি কখনো ভেবেছিল এটাই ছিল তাদের শেষ যাত্রা।

নিয়তির পরিহাসে টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাতে  ভরাডুবি হয়ে যায়। যায়হোক স্বপনের জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাতে আটলান্টিকে সমুদ্রে বক্ষে তলিয়ে যায়।

আরো পড়ুন : জগন্নাথ মন্দিরের রহস্য। 

টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য / টাইটানিক জাহাজ কিভাবে ডুবল 


এই পঙতিতে আমরা জানব টাইটানিক ডুবে যাওয়ার রহস্য সমন্ধে। আমাদের সবার মনে কম বেশি টাইটানিক জাহাজ কিভাবে ডুবল এরকম একটা প্রশ্ন ঘোরপাক খায় সর্বদা।

টাইটানিক জাহাজ কিভাবে ধ্বংস হয়েছিল জানার জিজ্ঞাসা সবার মনে আছে। আসুন তাহলে আপনাদিকে টাইটানিক জাহাজ ডোবার ঘটনার একটা বিবরণ দেওয়া যাক।

White Star line কোম্পানি টাইটানিকের পরিচালনার ভার দেন তাদের অভিজ্ঞ নাবিক এডওয়ার্ড ডি.স্মিথ কে। টাইটানিক আয়ারল্যান্ডের কুইন টাউন বন্দর থেকে বিদায় নিয়ে নিজের ছন্দে যাত্রা পথে এগিয়ে চলছিল।

যাত্রীরা নিজের,নিজের কক্ষে আমোদ,প্রমোদে,গান বাজনায় শ্যাম্পেনের ফোয়ারায় মাতোয়ারা ছিলেন। উচ্ছল জলরাশি,সমুদ্র বক্ষে নিস্তব্ধ রাত্রি আকাশের চাঁদনী ও তারা দের মেলা,

টাইটানিকের যাত্রাকে যেন আরো রোমাঞ্চিত করে তুলছিল। আকাশে মেঘেদের ভেলা যেন জোৎস্না উজ্জ্বল তারা নামক ফুল গুলিকে নিজেদের ডালিতে সাজিয়ে রাখছিল,চলছিল মেঘ ও জোছনার লুকোচুরি খেলা।

জাহাজের অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন স্মিথ ১৪ ই এপ্রিল রাত্রি বেলা জাহাজের স্টাফ ফ্লেদার ফিট ও রিজন লি,কে আদেশ দিলেন জাহাজের মাস্তুলে ওয়াচ টাওয়ারের উপরে গিয়ে সমুদ্র বক্ষে নজর রাখার জন্য।

ঐদিন দুপুর ০২ টা নাগাদ অনতি দূরে থাকা আমেরিকা নামের জাহাজের রেডিও অপারেটর টাইটানিক জাহাজের রেডিও কন্ট্রোল রুমে,যাত্রা পথে একটি ভাসমান আইসবাগ থাকার সতর্ক বাত্রা পাঠায়।

এর পরে পরেই মিসবা নামের আর একটা জাহাজ পুনঃরায় টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটার ৪০ মিনিট আগে,টাইটানিকের রেডিও অপারেটর জ্যাক ফিলিপ্স ও হার্ভাড ব্লিচকে,

টাইটানিকের যাত্রাপথে আইসবাগ (সমুদ্র বক্ষে থাকা বরফের ভাসমান পাহাড়) থাকার সতর্ক বাত্রা দেয়। কিন্তু টাইটানিকের রেডিও অপারেটর এই বাত্রাকে নিত্যান্ত ঠাট্টা মনে করে ইগনোর করে।

জাহাজের প্রধান নাবিক স্মিথের কাছ থেকে আইসবাগ থাকার খবরটি রেডিও অপারেটর নিজের কাছে আত্মগোপন করে রেখে দেয়।

জোছনা উজ্বল আটলান্টিকের সমুদ্র বক্ষে তীব্র ঠান্ডায় ১৪ এপ্রিল রাত্রিবেলা,ফেদার ফ্লিট জাহাজের মাস্তুলে ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমুদ্র বক্ষে নজর জমিয়েছিলেন।

কিন্তু কুয়াশাছন্ন ঠান্ডায় আধো আলো চাঁদনীতে হঠাৎ করে জাহাজের সামনে ৭০০-৮০০ মিটারের ব্যবধানে একটা আবছা মত পাহাড় লক্ষ করলেন।

তখন পর্যন্ত ফ্লিট বুঝে উঠতে পারেননি আসলে ওটা সমুদ্রে বক্ষে ভাসমান একটা হিমশৈল। ফেদার ফ্লিট বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে,স্বজোরে জাহাজের মাস্তুলে থাকা ঘন্টায় আঘাত হেনে সবাইকে সতর্ক করলেন।

ফোনের মাধ্যমে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে খবর দেওয়া হল। তখন জাহাজ থেকে হিম শৈলর দূরত্ব মাত্র ৪০ সেকেন্ডের।

ক্যাপ্টেন স্মিথ বিপদ আন্দাজ করে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধকরে টাইটানিককে বাঁদিকে মোড়ার জন্য আদেশ দিলেন। কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ করলেও এতো অল্প সময়ের মধ্যে জাহাজের গতিতে লাগাম টানা মুশকিল ছিল।

ঘড়ির কাটায় তখন রাত্রি ১১ টা বেজে ১০ মিনিট,টাইটানিকের ডানকিনারা গিয়ে ধাক্কা মারল হিম শৈলে। তখন জাহাজের জাড্য গতিতে নাবিকদের কোনো কন্ট্রোল ছিলনা।

টাইটানিক তার নিজস্ব জাড্য গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারল বরফের পাহাড়ে। জাহাজের ডানদিকে নিচের অংশে প্রায় ৯০ ফুট এরিয়ার নাট বোল্ট খুলে বেরিয়ে গেল।

জাহাজের তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীরা জাহাজের নিচের তলায় ছিল,তারা স্বজোরে একটা ঝটকা অনুভব করল। কিছুক্ষনের মধ্যে জাহাজের ফাটা চাদর ভেদ করে সমুদ্রের ঠান্ডা জল কুল কুল শব্দে,

তৃতীয় শ্রেণীর কেবিনে ঢুকতে লাগল। তখন পর্যন্ত জাহাজের কোনো যাত্রী স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি তারা সবাই টাইটানিক জাহাজের সাথে ডুবতে চলেছে।

আটলান্টিকের হার হিম করা ঠান্ডা জল ততক্ষনে টাইটানিকের এক চেম্বার থেকে অন্য চেম্বারে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

উপায় না দেখে টাইটানিকের ক্যাপ্টেন স্মিথ টাইটানিকের নক্সা প্রস্তুতকারক থমাস এন্ডারসনকে জরুরী তলব দিলেন। এন্ডারসন জাহাজের পরিস্থিতি এবং নক্সা দেখে আন্দাজ করলেন,

জাহাজের পাঁচ খানা চেম্বার জলমগ্ন হয়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে টাইটানিককে সমুদ্রে বক্ষে ভাসিয়ে রাখা কোনো মতেই সম্ভব নয়।

নিরুপায় নাবিক স্মিথ তখন অবশেষে জাহাজের কর্মীদের,লাইফ বোর্ট সমুদ্রে নামানোর নির্দেশ দিলেন। সকলের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল টাইটানিক কোনোদিন ডুববেনা।

তাই টাইটানিক জাহাজে,যাত্রীদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরিমানে,শুধু মাত্র ২০ খানা লাইফ বোর্ট  রাখা হয়েছিল।

কিন্তু ঐ সময় তারাহুরোর মধ্যে যেখানে এক একটা লাইফ বোর্ট এ ৬৫ জন যাত্রী বসার জায়গা করা ছিল,সেই জায়গায় ১৮-৩০ জন লোককে লাইফ বোর্ট এ বসানো হয়েছিল।

নাবিকের এই রকম দায়িত্বহীনতা সত্য কথা বললে মেনে নেওয়ার মত ছিলনা। কারণ একজন সিনিয়র নাবিককের কাছে জাহাজের যাবতীয় তথ্যাবলী প্রথম থেকেই তার নখদর্পনে দেওয়া হয়।

নাবিক স্মিথের কাছে প্রথম থেকেই জাহাজে মজুত যাত্রী সংখ্যা জাহাজে কতজন কর্মচারী কাজ করছে,জাহাজে পর্যাপ্ত জ্বালানী আছে কিনা কিংবা কতগুলো লাইফ বোর্ট আছে এই সমস্ত জিনিসের অনরেকর্ড ডেটা ছিল।

নাবিক যদি একটু ধৈর্য্যের সাথে মাথা ঠান্ডা রেখে লাইফ বোর্ট এ,পযাপ্ত পরিমানে যাত্রী বসাত,তাহলে আরো বেশি পরিমান যাত্রী প্রাণে বেঁচে যেত।

Untitled design 3 1

এভাবে সময় তার ছন্দে এগিয়ে চলছিল,টাইটানিকের ০৫ টা কেবিনে জল ঢুকে জাহাজের আগের দিক ক্রমশ ভারী হয়ে যাচ্ছিল।

এক্সপার্টদের মতে জাহাজের ০৫টি কেবিন জলমগ্ন হওয়ার ফলে টাইটানিক ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত আগের দিকে হেলে যায়,যার ফলে টাইটানিকের পিছন দিক উপরদিকে উঠে আসতে থাকে।

অনবরত টাইটানিকের কেবিনের বিভিন্ন অংশ জলে নিমজ্জিত হওয়ার ফলে জাহাজের আগের দিকের ওজন ক্রমশ বাড়তে থাকে।

এভাবে ১৯১২ সালের ১৫ ই এপ্রিল রাত ০২:২০ নাগাদ টাইটানিক দুটুকরো হয়ে মাঝ বরাবর ভেঙে আলাদা হয়ে যায়। টাইটানিক সম্পূর্ণভাবে ডুবতে আনুমানিক ০২ ঘন্টা সময় লেগেছিল।

টাইটানিক দুঃঘটনায় জাহাজের ত্রু মেম্বার ও যাত্রী সহ প্রায় ১৫১৭ জন অকালে তাদের প্রাণ বিয়োগ ঘটায়।সমস ট্যাটানিক দুঃঘটনায় শুধুমাত্র ৭১০ জন যাত্রীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল। 

অতঃপর টাইটানিক দুঃঘটনা ঘটার ০২ ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর,খবর পেয়ে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবশিষ্ট বেঁচে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে নিউইয়র্ক নিয়ে যাওয়া হয়।

আরো পড়ুন : কালাপানি সেলুলার জেল। 

টাইটানিক জাহাজের কিছু কথা 


টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য কথা সবাই জানতে চায়,কিন্তু টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ঘটনা ছাড়াও টাইটানিক জাহাজের এমন কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি,

যে বিষয় গুলোর জন্য টাইটানিক জাহাজ নির্মাণ ও টাইটানিক জাহাজের রহস্য নিয়ে মানুষ আরো বেশি করে জানতে ইচ্ছে প্রকাশ করে।

০১. Titanic জাহাজটি ছিল ঊনিবিংশ শতাব্দীর সবথেকে বেশি অর্থ ব্যায়ে নির্মিত ব্রিটিনের তথা বিশ্বের সবথেকে বড় যাত্রীবাহী বিলাস বহুল জলজাহাজ। 

০২. টাইটানিক জাহাজের দৈর্ঘ্য ছিল লম্বায় ২৬৯.১ মিটার,উচ্চতা ছিল ৫৩ মিটার এবং পুরো টাইটানিকের ওজন ছিল ৫২,৩১০ টন।

০৩. টাইটানিক জাহাজে আলাদা আলাদা করে মোট ০৫ খানা স্টিম ইঞ্জিন ছিল। যে ইঞ্জিনগুলি একত্রিতভাবে ৪৬,০০ হর্স পাওয়ার ক্ষমতা উৎপাদন করতো।

০৪. টাইটানিক জাহাজের নির্মাতা কোম্পানি White Star line দাবি করেছিল,Titanic কোনোদিন ডুববেনা, তাই টাইটানিকের সাথে শুধু মাত্র ২০ খানা লাইফ বোর্ট রাখা হয়েছিল।

যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকাংশে কম ছিল এবং হিসাব অনুযায়ী জাহাজের তিন শ্রেণীর মধ্যে শুধু এক তৃতীয়াংশ যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত ছিল।

০৫. আপনারা একটা কথা জেনে হয়ত বিস্মিত হবেন যে,White Star line কোম্পানি তাদের অন্য একটি জাহাজে কয়লার যোগান না থাকায়,

সেই জাহাজ থেকে অনেক যাত্রীকে টাইটানিক জাহাজে যাত্রা করার জন্য শিফ্ট করে দেয়। যার জন্য টাইটানিকের যাত্রীদের সাথে অন্য জাহাজটির যাত্রীদেরও,টাইটানিকের যাত্রীদের সাথে ডুবতে হয়।

০৬. টাইটানিকের যাত্রীদের বিলাসিতার কথা খেয়াল রেখে White Star line কর্তৃপক্ষ, টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য ৩১২ টি গানের লিস্ট সহ একটি হ্যান্ড বুক,

প্রেজেন্ট করেন। সেই বুক লিস্টে থাকা গান গুলির মধ্যে যাত্রীরা তাদের পছন্দ মত গান,টাইটানিকের  মিউজিশিয়ানদের যাত্রীদের জন্য পরিবেশন করতে হত।

০৭. এছাড়াও টাইটানিকের যাত্রী সুবিধার কথা মাথায় রেখে,জাহাজের ভিতরে সুইমিং পুল, জিম,লাইব্রেরী,বার ও থিয়েটার হল যাত্রীদের মনোরঞ্জনের কথা মাথায় রেখে ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

০৮. টাইটানিকের কিচেন রুমে যাত্রীদের খাবারের যোগান হিসাবে ৪০,০০০ পাউন্ড মাংস,৪০,০০০ ডিম, ওয়াইন সপে ১৫,০০০ ওয়াইন পানীয় ও ৪,০০০ সিগার মজুত ছিল।

০৯. বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী টাইটানিক বরফের পাহাড়ে ধাক্কা লাগার পর আরো যদি অতিরিক্ত ৩০ সেকেন্ড সময় পাওয়া যেত,তাহলে হয়ত টাইটানিকের ভরাডুবি হতনা,টাইটানিককে বাঁচানো যেত।

১০. টাইটানিক যখন উত্তর আটলান্টিকের জলে নিম্মজিত হচ্ছিল,তখন শেষ অবধি যাত্রীদের সান্তনা দেওয়ার জন্য টাইটানিকের মিউজিশিয়ানরা অকুতভয়ে,দেহে প্রাণ থাকা অবধি মিউজিক বাজিয়েছিলেন।

এরকম কঠিন বিপদ সংকুল মুহূর্তে নিজেদের প্রাণের পড়োয়া না করে, যাত্রী সান্তনার জন্য বাদ্যযন্ত্রে সুর লাগানো চাট্টিখানি কথা নয়।এমন লোকেদের প্রসংশা না করলে সত্যিই ভারী অন্যায় হবে।

১১. টাইটানিককের ইঞ্জিন চালানোর জন্য প্রতিদিন ৬০০ টন কয়লার দরকার পড়ত। তাই শিফ্ট অনুযায়ী প্রতিদিন টাইটানিকের বয়লারে,

কয়লার যোগান দেওয়ার জন্য,জাহাজের ৮৬০ ত্রু মেম্বারের মধ্যে ১৭৪ জন্য ত্রু মেম্বার কয়লার জোগানে ব্যস্ত থাকত।

১২.টাইটানিকের মোট ০৪ খানা চিমনি ছিল। এরমধ্যে শুধু ০৩ খানা চিমনি ব্যবহার হত, বাকি ০১ খানা চিমনি রাখা হয়েছিল টাইটানিকের ডেকোরেশন এবং জাহাজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য।

আপনাদের সুচনার্থে একটা জিনিস বলে রাখা ভালো টাইটানিকের ০৩ টি চিমনি দিয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০ টন ওজনের ধোঁয়া বার হত।

১৩. টাইটানিকের ভেঁপুর আওয়াজ ,আপনারা জাহাজের সিটিও বলতে পারেন,এতটাই তীব্র ছিল যে টাইটানিকের সিটির আওয়াজ ১৬ কিমি দুর থেকেও শোনা যেত।

১৪. আপনাদের অনেকের মনে একটা প্রশ্ন ঘোরা ফেরা করে টাইটানিক জাহাজ কোন মহাসাগরে নিমজ্জিত হয় ? তাহলে আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি টাইটানিক উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়।

১৫. টাইটানিক জাহাজটি যখন ডুবতে বসে তখন বেশির ভাগ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে সমুদ্রের জলে ঝাঁপ দেয়। তাই যাত্রীরদের অধিকাংশ আটলান্টিকের হার হিম করা জলে,

প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে মারা যায়। আটলান্টিকের জলের -০২ ডিগ্রী তাপমাত্রায় একজন সুষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষে ১৫ মিনিটের বেশি বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

১৬. কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন এহেন পরিস্থিতে হার হিম করা ঠান্ডায়,যেখানে মানুষ জমে ক্ষীর হয়ে যায়,সেখানে টাইটানিকের কুক চার্লস যোগেন,

অবিরাম হুইস্কী পান করে আটলান্টিকের বুকে নিজেকে ০২ ঘন্টা বাবদ বেঁচে ছিলেন। পরে উদ্ধার কারী জাহাজ সেখানে পৌঁছালে চার্লস যোগেনকে লাইফ বোর্ট এ নিয়ে আসা হয়।

১৭. টাইটানিকের জাহাজে ত্রু মেম্বার ও যাত্রী নিয়ে ২৩ জন মহিলা যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে ১৩ জন দম্পতি তাদের মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য টাইটানিকে জল বিহারে এসেছিলেন।

১৮. টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা আজ ১০০ বছরের ও বেশি সময় অতিক্রম করে গেছে। আর এই টাইটানিক জাহাজের মিলিভিনা দেন নামের মহিলা ছিলেন টাইটানিকের সর্ব কনিষ্ঠ যাত্রী।

মিলিভিনা দেন যখন টাইটানিকে যাত্রা করেছিলেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ০২ মাস, ২০০৯ সালের ৩১ শে মে টাইটানিকের সর্ব কনিষ্ঠ যাত্রী ৭৩ বছর বয়সে মারা যায়।

মিলিভিনা দেন মারা যাওয়ার সাথে,সাথে টাইটানিকে যাত্রা করা শেষ যাত্রীর বেঁচে থাকার অস্তিত্ব মুছে যায়। এখন বর্তমানে টাইটানিকে যাত্রা করা কোনো যাত্রী আর জীবিত নেই।

১৯. টাইটানিকের সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হওয়া হিম শৈলটির উচ্চতা ছিল ১০০ ফুটের কাছাকাছি।  ঐ হিমবাহটি গ্রীনল্যাণ্ড থেকে ভেসে এসেছিল বলে মনে করা হয়।

২০. টাইটানিক জাহাজের মধ্যে যাত্রী ছাড়াও ২২৪ টি মত পোষ্য কুকুর,বিড়াল ছাড়াও টিয়া ময়নার মত পোষ্য পাখী ছিল।

২১. টাইটানিক জাহাজটি ডোবার আগে টাইটানিকের কন্ট্রোল রুমে রেডিও অপারেটরকে  আরো অন্যন্য জাহাজ থেকে মোট ০৬ বার হিম শৈল নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।

২২.উত্তর আটলান্টিক সাগরে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বার করার জন্য ১৯৮৫ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায় গ্রিনল্যান্ড আয়ারল্যান্ড থেকে ৬০০ মিটার দূরে, ১২০০ ফুট নিচে সমুদ্রের গভীরে।

Untitled design 1

২৩. হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন ১৯৯৭ সালে ১০০০ কোটি টাকা ব্যায়ে টাইটানিক নামের একটি সিনেমা তৈরী করেন।

সিনেমাটি তখন থেকে আজ পর্যন্ত দর্শকদের মনে সমান আদর পেয়ে আসছে। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি আজ পর্যন্ত টাইটানিক সিনেমাটি সবথেকে বেশি অস্কার পুরুস্কার পেয়েছে।

২৪. টাইটানিক সিনেমাটি নির্মাণের জন্য ১০০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল। আর টাইটানিক জাহাজ নির্মাণে খরচ হয়েছিল ৩৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।

যে টাকা দিয়ে অনায়সে ওরকম আরো ২০ খানা বিলাস বহুল টাইটানিক জাহাজ White Star line তৈরি করতে পারত।

FAQ


প্রশ্ন : টাইটানিক জাহাজ নিম্মজিত হয়েছিল কতসালে ? 

উঃ -টাইটানিক জাহাজ ১৯১২ সালে ১৫ ই এপ্রিল নিম্মজিত হয়েছিল।

প্রশ্ন : টাইটানিক জাহাজ কোন মহাসাগরে নিমজ্জিত হয় ? 

উঃ- টাইটানিক জাহাজ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে নিম্মজিত হয়।

প্রশ্ন : টাইটানিক জাহাজের দৈর্ঘ্য কত ? 

উঃ- টাইটানিক জাহাজের দৈর্ঘ্য হল ২৬৯.১ মিটার।

প্রশ্ন : টাইটানিক জাহাজ কোন দেশ তৈরি করেছিল ?   

উঃ- টাইটানিক জাহাজ ব্রিটেন তৈরি করেছিল।

প্রশ্ন : টাইটানিক সিনেমার নায়িকার নাম কি ? 

উঃ- টাইটানিকের নায়িকার নাম কেট উইন্সলেট।

পরিশিষ্ট


টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার রহস্য নিয়ে জানতে আমরা সকলে উৎগ্রীব থাকি। টাইটানিক জাহাজ দুঃঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আজ কতকাল কেটে গেছে।

কিন্তু আদৌকি টাইটানিকে আটলান্টিক গ্রাস করতে পেরেছে ? আজও বিশ্ববাসীর মনে টাইটানিক নিজের ছন্দে ভেঁসে চলেছে।

তাই টাইটানিক দুঃঘটনা আজ শত বছর অতিক্রম করে গেলেও, মানুষের মনে সে সাঁতার দেবে। তাকে এভাবে কোনো ঝড় ঝাঁপটা কিন্তু কোনোদিন ডোবাতে পারবেনা।

টাইটানিক নিজের ছন্দে মানুষে মন মোহনায় যুগ যুগ ধরে ভেঁসে বেড়াবে। যাই হোক আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের লেখা যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ভালোবাসা দিয়ে শেয়ার করবেন।

4.4/5 - (11 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here